ভাড়ার কথা এড়িয়েই ভরসার অটো-নীতি আজ জানাবে রাজ্য

খসড়া অটো-নীতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতার দরুন অটোর ভাড়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিল না সরকার। আজ, মঙ্গলবার ভাড়ার বিষয়টি বাদ দিয়েই খসড়া অটো-নীতি প্রকাশ করতে চলেছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৬
Share:

খসড়া অটো-নীতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতার দরুন অটোর ভাড়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিল না সরকার। আজ, মঙ্গলবার ভাড়ার বিষয়টি বাদ দিয়েই খসড়া অটো-নীতি প্রকাশ করতে চলেছে তারা।

Advertisement

নানা ভাবে দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে অটো। ইচ্ছেমতো ভাড়া নেওয়াটা তার অন্যতম। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নির্দেশ দিয়েছিলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়া চলবে না। এখন নীতি প্রণয়ন করতে গিয়ে সরকার সেই ভাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না কেন? কেনই বা বিষয়টি ছেড়ে রাখল সেই ইউনিয়নের হাতে?

পরিবহণ দফতরের খবর, অটোর ভাড়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক রায় রয়েছে। অধিকাংশ রায়েই বলা হয়েছে, অটো চালাতে হবে মিটারে। এই অবস্থায় ভাড়া ঠিক করার দায়িত্ব সরকার নিজের হাতে নিলে তারাই যে অটোয় মিটার বসাতে চায় না, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই বিতর্ক এড়াতে খসড়া অটো-নীতিতে ভাড়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে তারা। এক পরিবহণকর্তা বলেন, ‘‘সরকারও রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়। রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষই চান না, অটো মিটারে চলুক। কারণ, মিটার বসলে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যেতে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হবে। মিটারে অটো চালালে অপ্রিয় হবে সরকারই। তাই সরকার এই ঝুঁকি নিতে নারাজ।’’ ওই কর্তা জানান, পুজোর পরে বিষয়টি নিয়ে কৌঁসুলি এবং আইনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন পরিবহণমন্ত্রী। তার পরেই এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে দফতর।

Advertisement

পরিবহণ দফতরেরই একাংশের মতে, ভাড়ার ব্যাপারে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত না-নেওয়ায় অটোর উপরে যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ রয়ে গেল ইউনিয়নের হাতেই। ইউনিয়নের হাতে রাশ থাকায় অটোচালকদের এতটা রমরমা। আর ইউনিয়নের দাপটের মূলে আছে ভাড়া চূড়ান্ত করার ব্যাপারে শেষ কথা বলার অধিকার। তাই ভাড়া ঠিক করার ক্ষমতা ইউনিয়নের হাত থেকে গেলে অটোর বেপরোয়া মনোভাবও পাল্টাবে না। দুর্দশা কমবে না যাত্রীদের।

সোমবার পরিবহণ দফতরের কর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, অটো এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ভবিষ্যতে অটো সরকারের আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে। পরিবহণমন্ত্রী জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার থেকেই চালু হচ্ছে একটি হেল্পলাইন এবং একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। ওই দু’টি নম্বরে যাত্রীরা অটো সংক্রান্ত যে-কোনও অভিযোগ জানাতে পারবেন।

২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ওই কমিটির কোনও সুপারিশই রূপায়িত হয়নি। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ঠাকুর কমিটির রিপোর্টকেই ভিত্তিতেই নতুন অটো-নীতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত না-নিলেও অটোচালকদের শৃঙ্খলায় বাঁধতে এক গুচ্ছ চিন্তাভাবনার কথা বলা হয়েছে খসড়া অটো-নীতিতে। তার মধ্যে প্রধান হল বেআইনি অটোকে বৈধ করার প্রক্রিয়া। খুব শীঘ্রই কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় চলা বেআইনি অটোগুলিকে বৈধ করার কাজ শুরু করবে রাজ্য সরকার।

‘‘অটো বৈধ না-হলে তাকে আইনের শাসনের আওতায় আনা যাবে না। অবৈধ অটোয় কোনও যাত্রী দুর্ঘটনায় পড়লে তিনি ক্ষতিপূরণও পান না। এই অবস্থায় যাঁরা এত দিন অটো চালাচ্ছেন, তাঁদের সব অটোকে বৈধ করার সুযোগ দেবে সরকার। কিন্তু তাঁদের সরকারি বিধিনিষেধ মানতে হবে,’’ বলছেন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রুট পুনর্বিন্যাসও করা হবে। অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। অটোচালকের দু’পাশে যাত্রী থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। অটোয় মিউজিক সিস্টেম এবং এলইডি আলোও বরদাস্ত করবে না প্রশাসন। ভাড়ায় সরকারি লাগামের ব্যবস্থা না-হলেও নতুন নীতিতে এই ধরনের কিছু আশা-ভরসার হদিস থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন