হতে পারে টানা চার দিন ছুটি বা ‘লং উইকএন্ড’! তবু মনটা খচখচ করছে কারও। বুধবার, প্রাক্-ছুটি সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরিয়ে মাঝবয়সি সরকারি কর্মচারীটির আফসোস, ইস্, গত বার দোলের মজাটাই বেশি ছিল।
সে-বার দোল, হোলির মধ্যে রবিবার পড়ায় তার ঠিক পরেই আর একটি কাজের দিনকে ছুটিতে রূপান্তর করে রাজ্য সরকার।
অতএব মানতেই হবে ছুটির এই জাদুকাঠি জ্বলন্ত বাংলার ভাগ্যাকাশে। আর যা-ই দুঃখ থাক সরকারি কর্মচারীদের চালু রসিকতা, পশ্চিমবঙ্গের ছুটির ঈশ্বরের দরাজ হৃদয়, চিকন মেজাজ। তাঁর চেতনার রঙে কখনও ছুটি হল শুক্রবার। কখনও বা সোমবার, মঙ্গলবার— সবই রেঙে উঠছে ছুটি হয়ে।
বাস্তবিক, ঐশ্বরিক আশীর্বাদের মতোই ২০১১-র পর থেকে এ রাজ্যে ছুটির সংখ্যা হু-হু করে বেড়েছে। এ বছর অক্টোবরেই পুজোর আশপাশে শনি-রবি ও বিস্তর ফাউ ছুটি ধরে টানা ১৩ দিনের বিশ্রামের হাতছানি। মাঝে একটা শু্ক্রবারে ছুটি মঞ্জুর হলে এই মেয়াদ ১৬ দিন হবে। বাম আমলে শুধু দোলে ছুটি থাকত হোলিতে নয়। কালীপুজোর পরের দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা বা ছটে ছুটি জুটত না! নিন্দুকেরা বলে আসছে, এত ছুটি আসলে সান্ত্বনা-পুরস্কার!
আইএনটিইউসি অনুমোদিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বা বাম-প্রভাবিত কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহরা হতাশ, ৪২% মহার্ঘ ভাতা বাকি। বেশির ভাগ রাজ্যে পে-কমিশন চালু। ডিএ বকেয়া ঢের কম। আর বাংলার স্রেফ
হাতে থাকল, ছুটি। মলয়বাবু বলছিলেন, ‘‘সরকার নাকি জন অধিকার সুরক্ষা বিল এনে জরিমানা করবে? হাসপাতাল থেকে অন্যত্র এত ছুটিতে পরিষেবা লাটে উঠবে।’’ শাসক দলের অনুগামী রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, ‘‘বাম আমলে ধর্মঘট করে যা শ্রম দিবস নষ্ট হয়েছে এর পাশে ছুটির ক্ষতি ক্ষতিই না!’’ সরকারি কর্মচারীরা কিন্তু জানেন, ঘোষিত ছুটির বাইরেও আস্তিনে অনেক ছুটি লুকোন। জামাই ষষ্ঠীতে অবধি ছুটির ঈশ্বর আগেও সদয় হয়েছেন। সরস্বতী পুজো শনিবার পড়ায় শুক্রবার হাফছুটি মিলেছে।
সবে মার্চ পড়ল! বছরভর আরও ছুটির খেলার আশায় মনপ্রাণ রঙিন।