Dengue

‘অজানা জ্বর’ লিখে দায়িত্ব সারল সরকারি হাসপাতাল

সরকারি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে তিন দিন চিকিৎসা চলার পরেও বাঁচানো গেল না মমতাজ বিবিকে (৫৬)। মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা হল, ‘ইনডিটারমিনেট ফিভার’ বা অজানা জ্বর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৩
Share:

সেই শংসাপত্র।—নিজস্ব চিত্র।

সরকারি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে তিন দিন চিকিৎসা চলার পরেও বাঁচানো গেল না মমতাজ বিবিকে (৫৬)। মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা হল, ‘ইনডিটারমিনেট ফিভার’ বা
অজানা জ্বর।

Advertisement

১৪ তারিখ থেকে কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ভর্তি ছিলেন দেগঙ্গার নিরামিশার বাসিন্দা মমতাজ। তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘অজানা জ্বর’ লেখা হয়েছে জেনে বিস্মিত সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। শহরের এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বিজ্ঞান যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে অজানা জ্বর বলে কিছু থাকতে পারে না। কোনও না কোনও কারণ চিহ্নিত হতেই হবে।’’

মমতাজের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য চাপতে গিয়েই এমন লেখা হয়েছে কিনা। রাজ্য বারবারই দাবি করছে, ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ডেঙ্গিতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জমা দিয়ে আদালতে একপ্রস্থ মুখ পুড়েছে সরকারের। ডেঙ্গির তথ্য গোপন করার চেষ্টা চলছে বলে বিরোধীরা লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালের শংসাপত্রে ‘অজানা জ্বর’-এর উল্লেখ পরিস্থিতি আরও ঘোরাল করল বলে অভিযোগ।

Advertisement

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। কাগজপত্র খতিয়ে না দেখে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সরকারি তথ্য যা-ই বলুক না কেন, শুক্র ও শনিবার রাজ্যের নানা প্রান্তে জ্বর ও ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে আরও ৫ জনের। উত্তর ২৪ পরগনার গণ্ডী ছাড়িয়ে জ্বর, ডেঙ্গি থাবা বসাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য হাড়িয়ায় থাকতেন প্রসেনজিৎ সরকার ওরফে রানা (৪০)। শনিবার দুপুরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা, ‘ডেঙ্গি ফিভার উইথ মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর।’

দিন কয়েক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন খড়দহের রবীন্দ্রপল্লির ফুটবলার ভাস্কর ঘোষ (৩৬)। শনিবার সকালে বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা ‘ডেঙ্গি’।

পূর্ব মেদিনীপুরেও জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন এক জন। কিছু দিন নার্সিংহোমে থাকার পরে দু’দিন আগে বাড়ি ফেরেন তমলুকের শালগেছিয়ার দেবকান্ত মিত্র (৩৮)। ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় শুক্রবার এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। রাতে মারা যান তিনি। মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘এনএস-১ পজিটিভ ফিভার উইথ ভাইরাল মায়োকার্ডিটিস’ লেখা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে হুগলির উত্তরপাড়া পুরসভার মহামায়া হাসপাতালে মারা যান মীরা সোনকার (৪৫)। উত্তরপাড়াতেই থাকতেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, মীরাদেবীর রক্তে এনএস-১ পজিটিভ থাকলেও ডেঙ্গি হয়নি। মৃত্যুর শংসাপত্রে শুধু ‘জ্বর’ই লেখা হয়েছে।

মৃত সন্তান প্রসবের পড়েও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ডেঙ্গি আক্রান্ত জেসমিতা হালদার (২৬)। কুড়ি দিন ধরে সেই যুদ্ধের শেষে হার মানতেই হল তাঁকে। শুক্রবার বাইপাসের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় জেসমিতার। উল্টোডাঙার অমিত সাহার সঙ্গে গত বছর বিয়ে হয় বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে জেসমিতার। কালীপুজোর সময়ে কসবার হালতুতে বাপের বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন অন্তঃসত্ত্বা জেসমিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন