ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে ভাঙড়ের আন্দোলনে কি রফাসূত্র মিলতে চলেছে? সরকারি সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়ার পথে এগোচ্ছে প্রশাসন। জমিহারাদের জন্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন-সহ একটি প্যাকেজের পরিকল্পনা হচ্ছে। সব ঠিকমতো চললে দু-এক দিনের মধ্যেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।
আন্দোলনকারীদের একাংশ অবশ্য সমাধানসূত্র নিয়ে এখনও সংশয়ী। তাঁদের মতে, সরকারের প্রস্তাবে এক কথায় সায় দিয়ে ফেললে পরে তা ব্যুমেরাং হতে পারে কি না, সে সব দিক খতিয়ে দেখেই চূড়ান্ত মীমাংসার রাস্তায় এগোনো উচিত। তবে আন্দোলনকারীদের তরফে অলীক চক্রবর্তী, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, বিশ্বজিৎ হাজরার সঙ্গে গ্রামবাসী মিলে ৪৫ জনের একটি দল আজ, সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পাওয়ার গ্রিডের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
নবান্ন ও জেলা প্রশাসন সূত্রের ইঙ্গিত, ভাঙড়ে পাওয়ারগ্রিড প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য একটি সামগ্রিক প্যাকেজ হাতে নিচ্ছে সরকার। তার আওতায় যেমন জমিহারাদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব আছে, তেমনই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসনের নানা সূত্রও আছে। ওই এলাকার একটি রাস্তা নিয়ে দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ ছিল গ্রামবাসীদের। সেই ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণের কাজেও হাত দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা যে দিকে গড়িয়েছে, তাতে সমাধানে পৌঁছনো এখন সময়ের অপেক্ষা। যা নিয়ে আবার ভিন্নমত আছে আন্দোলনকারীদের একাংশের। মত জানতে চাওয়া হলে শর্মিষ্ঠা রবিবার বলেছেন, ‘‘পাওয়ার গ্রিড মেনে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। তবে দু’দিন আগে সংশোধিত পরিকল্পনার প্রস্তাব এসেছে সরকারের দিক থেকে। আলোচনা চলছে।’’
এই গোটা রফাসূত্রে সব চেয়ে স্পর্শকাতর ও জটিল দিক হল, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের দাবি। ভাঙড়ে জমি আন্দোলনের জেরে গুলিচালনার সময় থেকেই নানা ধারায় মামলা রুজু হয়েছে প্রতিবাদী গ্রামবাসী ও তাঁদের আন্দোলনে নেতাদের বিরুদ্ধে। অলীক নিজেই এখন জামিনে মুক্ত। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ফৌজদারি মামলা সব রাতারাতি তুলে নেওয়া সম্ভব হয়। এখানে কৌশলে এবং সন্তর্পণে এগোতে হবে। আন্দোলনকারীরা এই যুক্তি কতটা মানবেন, তার উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে রফাসূত্র।
আন্দোলনকারীরা এ দিন সন্ধ্যায় নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছিলেন। সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের কমিটিতে সরকারি প্রস্তাব স্বীকারের ব্যাপারে রাত পর্যন্ত মতৈক্য হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটের পরেও সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে যাঁদের ‘মাওবাদী’ বলা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গেই সরকার এখন রফা করতে আগ্রহী কেন— এই যাবতীয় প্রশ্ন ভেবে দেখতে চান আন্দোলনকারীদের একাংশ। সরকারের যাবতীয় কথা মেনে নিয়ে আন্দোলনে ইতি ঘোষণা করা উচিত হবে না বলে মনে করছেন অনেকে।