প্রতীকী ছবি।
সাতাশি বছরের প্রবীণা প্যাথলজিস্ট। নথি বলছে, এ-হেন অশীতিপর প্যাথলজিস্টও পার্ট টাইম, ফুল টাইম মিলিয়ে খান পনেরো প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সঙ্গে জড়িত!
বছর বাষট্টির এক এমবিবিএস ডাক্তার প্যাথোলজিতে ডিপ্লোমা করেছেন। তাঁকেও নিজেদের পার্ট টাইম বা ফুল টাইম প্যাথলজিস্ট হিসেবে দেখিয়ে হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে নতুন লাইসেন্স এবং পুরনো লাইসেন্স নবীকরণের আবেদন জানিয়েছে প্রায় একশো ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক!
দ্বিতীয় চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। তাঁকে হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার অফিসে ডেকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। সেই চিকিৎসক ৯-১০টি ল্যাবরেটরির নাম জানিয়ে মুচলেকা দেন: এ ছাড়া তিনি অন্য কোনও ল্যাবরেটরির প্যাথলজিস্ট হিসেবে কাজ করবেন না। অন্য ল্যাব তাঁর নাম দিলে তাদের বিরুদ্ধে যেন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এত দিন স্বাস্থ্য দফতর সব জেনেও চোখ বন্ধ করে রাখত বলে অভিযোগ ছিল। ভুয়ো ডাক্তারদের মতো এ বার বিভিন্ন ল্যাবরেটরির ‘ভুতুড়ে’ প্যাথলজিস্টদের চিহ্নিত করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য দফতর। ভূত তাড়াতে ল্যাবে-ক্লিনিকে হঠাৎ হানা দেওয়া হবে। ক্ষেত্রবিশেষে তলব করে সতর্ক করে দেওয়া হবে ডাক্তার-প্যাথলজিস্টদের। হানাদারির জনেয সব জেলায় ডেপুটি সিএমওএইচ, মা ও শিশু স্বাস্থ্যরক্ষা অফিসার, যক্ষ্মা মোকাবিলা অফিসার, কুষ্ঠ মোকাবিলা অফিসার, এসিএমওএইচ-কে নিয়ে দল গড়া হয়েছে। বিভিন্ন ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে গিয়ে সেখানে কোন কোন চিকিৎসক যুক্ত, তাঁরা কোন কোন দিন কখন আসেন, সবই যাচাই করা হচ্ছে। খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে অনলাইন আবেদনগুলিও। এতেই প্রথম সাফল্য মিলেছে হাওড়ায়। এমন কিছু চিকিৎসককে চিহ্নিত করা গিয়েছে, যাঁদের নাম ও সই অনেক ল্যাবরেটরি নিজেদের রিপোর্টে ব্যবহার করছে, অথচ বাস্তবে সেই রিপোর্ট ওই প্যাথলজিস্টরা তৈরিই করেননি।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ভবানী দাস বললেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের না-জানিয়ে অনেক ল্যাবরেটরি যে তাঁদের সই জাল করে অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন জানাচ্ছে, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’টি ল্যাবরেটরিকে গত সপ্তাহে শো-কজ করা হয়েছে। দুই প্যাথলজিস্টের সই জাল করে লাইসেন্স নবীকরণের জন্য তারা আবেদন করেছিল অনলাইনে। এই ধরনের অপরাধে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে ল্যাবরেটরি বা ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। কোনও চিকিৎসক এতে জড়িত থাকলে মেডিক্যাল কাউন্সিলে গিয়ে তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আবেদন জানাতে পারে স্বাস্থ্য দফতর। এ বার তারা সেই পথেই হাঁটবে বলে জানাচ্ছে ওই দফতর।
মাসিক বা বার্ষিক মোটা টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু চিকিৎসক কিছু ল্যাবরেটরির রিপোর্টের গোছা গোছা পাতায় একসঙ্গে সই করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অর্থাৎ পরীক্ষার আগেই পরীক্ষকের সই হয়ে যাচ্ছে! পরে মূলত ডিপ্লোমাধারী ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানেরা রিপোর্ট তৈরি করে আগে থেকে চিকিৎসকের সই করা কাগজে তা বসিয়ে দিচ্ছেন। এই ধরনের অনেক টেকনিশিয়ানের ডিপ্লোমার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। অথচ সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই চিকিৎসা হচ্ছে, ওষুধ বা ইঞ্জেকশন চলছে!