গত এক দশকে রাজ্যে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন তেমন বাড়ছে না। কিন্তু বছর বছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছের উপরে নির্ভর করে থাকা মৎস্যজীবীদের সংখ্যা। তাই কেন্দ্রীয় সরকার সামুদ্রিক মৎস্য প্রজনন কালের সময় মাছ ধরতে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকারও ভাবছে একই কথা। কিন্তু তার আগে একবার ইউনিয়নগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ধাপ ফেলতে চান রাজ্যের মৎস্য কর্তারা।
সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে এর আগে ১৫ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হত। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার তা ৬০ দিনের করেছে। গত ১০ এপ্রিল কেন্দ্রের তরফে পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলির জন্য ওই নির্দেশ জারি হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও ওই নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করেনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবারের অতিরিক্ত মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ বলেন, ‘‘মাছের উৎপাদন বাড়ছে না কিন্তু মৎস্যজীবীর সংখ্যা বাড়ছে বছর বছর। তাই এক দিকে যেমন নতুন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে, তেমনি নিষেধাজ্ঞার সময়ও বাড়ানো হচ্ছে। ইউনিয়নগুলিকে সঙ্গে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারপরে নির্দেশ জারি হবে।’’
নিষেধাজ্ঞা থাকার সময় যাতে মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরতে না যান তার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই বিকল্প জীবিকার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। পুরোপুরি মাছের উপরে নির্ভর করে থাকা পরিবারগুলির এই দুই-আড়াই মাস মাছ না ধরে সংসার খরচ চালানোর জন্য নানা রকমের ছোট ছোট জীবিকার জন্য টাকা দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। কিন্তু তার বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে যদি মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও বাড়ে, তবে চাপে পড়বেন মৎস্যজীবীরা।
এক একটি ট্রলারে প্রায় ১৫ জন করে মৎস্য শ্রমিক পাড়ি দেন সমুদ্রে। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই সরকারি নথিভুক্ত হস্তচালিত এবং যন্ত্রচালিত মিলিয়ে মাছ ধরা নৌকোর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। কেবল মাঝি-মাল্লারাই নন, তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, জাল তৈরি থেকে শুরু করে বরফকল, আড়ত শ্রমিক এবং ভ্যান, ট্রাক চালকদের মতো বহু মানুষ। বিষয়টি অজানা নয় সরকারের কাছেও।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতির কথায়, ‘‘আমাদের মতো ট্রলার মালিকদের যেমন অসুবিধা, তার চেয়েও বেশি অসুবিধা দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা অসংখ্য মৎস্যশ্রমিকদের। মরসুমে এক দিন বসে থাকা মানে অনেক টাকার ক্ষতি। রাজ্য সরকার যাতে বিকল্প ব্যবস্থা দ্রুত চালু করে তার প্রস্তাব দেব।’’