মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তাঁর মা-মাটি মানুষের সরকার ‘কাটমানি’তে চলে না। তাই কাজে গাফিলতি হলে ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে এমনই নিদান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। তার উপর এক শ্রেণির ঠিকাদারদের গড়িমসিতে থমকাচ্ছে উন্নয়ন। তাতেই মুখ্যমন্ত্রী রুষ্ট। বিশেষ করে রাস্তার কাজে পঞ্চায়েত দফতরের ভূমিকাতেও সন্তুষ্ট নন তিনি। সম্প্রতি নদিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে ডেঙ্গি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এ দিনের বৈঠকে মন্ত্রী ছিলেন না। তবে দফতরের প্রধান সচিব সৌরভ দাসকে কড়া ভাবেই মমতা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত দফতরেরও মনিটরিং থাকা দরকার। সরকারের টাকা দিলাম আর মেরে দিলাম, কাটমানি খেলাম। তোমাদের কাটমানি খাওয়ার জন্য সরকার চালাই না। আমি চাই জনগণের কাজ হোক। তার পরিবর্তে কিছু চাই না।’’
পঞ্চায়েত মন্ত্রী অবশ্য বলছেন, ‘‘যে রাস্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আরআইডিএফ প্রকল্পে ওই রাস্তা তৈরির দায়িত্ব পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের। ঠিকাদারও তারাই নির্বাচন করে। এর সঙ্গে দফতরের সরাসরি যোগ নেই।’’
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে এক শ্রেণির ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এই তোপ কেন? তৃণমূলের অন্দরের ব্যাখ্যা, আসলে এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে চেয়েছেন নেত্রী। দল ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ভাঙতে চেয়েছেন ঘুঘুর বাসা। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা নতুন নয়। তা করাও হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। আধিকারিকদের মতে, মমতার এ দিনের ঘোষণায় ঠিকাদার বাতিল প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।
প্রসঙ্গটা তুলেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানান, কিছু ঠিকাদার কাজ ঝুলিয়ে রাখছেন, কাজের মান খারাপ হচ্ছে। মূলত পঞ্চায়েত দফতর ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তার কাজে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান শৈবালবাবু। তারপরই সব জেলাশাসককে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “যাঁরা জনগণের টাকা নিয়ে কাজ করবে না, তাঁরা যেন ভবিষ্যতে কোনও কাজে অগ্রাধিকার না পায়। রাস্তার কাজ, আবাস যোজনার কাজে ঠিকাদাররা অকাজ-কুকাজ করছে কি না, দেখতে হবে। সব ডিএমকে বলছি মনিটরিং করতে হবে।”
পঞ্চায়েতের প্রধান সচিব বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চড়া সুরে বলেন, “একটা টেন্ডার করতে ন’মাস কেটে যায়। তোমরা নতুন ঠিকাদারদের সুযোগ দিচ্ছ না কেন। কেন বারবার পুরনো ঠিকাদারদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে?’’ সৌরভবাবু জানান, অনেক সময় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের রাস্তার কাজে ঠিকাদার পাওয়া যায় না বলে কেন্দ্র থেকে দু’টি সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হয়। কিন্তু সে ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘স্থানীয় মানুষের কাজ স্থানীয়রাই বুঝতে পারবেন। দিল্লি থেকে ঠিকাদার ঠিক করে দেবে। এটা হয় নাকি!’’