নিদান: ইলামবাজারে তৃণমূলের ব্লকভিত্তিক জনসভায় অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
‘‘নিজেদের মধ্যে মারামারি কিছুতেই বরদাস্ত করব না”— রবিবার বিকেলে ইলামবাজারে দলের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কর্মীদের প্রতি এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব ক’টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের লক্ষ্য নিয়েও নামতে বলেন। যোগ করেন, “যদি কেউ বাড়াবাড়ি করে, যদি কেউ দুষ্টুমি করে, তা হলে ওষুধ তো আপনাদের জানা আছে। সেই ওষুধ দিয়ে দেবেন ভাল হয়ে যাবে।” জনসভা শেষে অনুব্রতের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান মুকুল রায় কি জেলায় দলের সংগঠনে ভাঙন ধরাতে পারবেন? অনুব্রতর কটাক্ষ, “আগে নিজের ছেলেকে নিজের দলে নিয়ে যান, তারপর অন্যদের নিয়ে যাবেন।”
রবিবার বিকেল তিনটে থেকে ইলামবাজারের মিলের মাঠে শুরু হয় তৃণমূলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জনসভা। এই জনসভায় তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ছাড়াও ছিলেন মৎসমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম প্রমুখ। গত ২ নভেম্বর ইলামবাজারের শুনবুনি গ্রামে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শামিউল্লাহকে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে অন্য গোষ্ঠীর আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এ দিনের জনসভার বক্তব্যে কার্যত সেই ঘটনাকে তুলে ধরেই দলীয় কর্মীদের গোষ্ঠীকোন্দল থেকে দূরে থাকতে ফের সতর্ক করার রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেল অনুব্রত মণ্ডল ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে।
সভায় অনুব্রত বলেন, “ইলামবাজারে দলের ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতিরা এলাকার উন্নয়ন করেন। কয়েক’টা লোক নোংরামি করছে। বলে রাখছি,
নিজেদের মধ্যে মারামারি করলে বরদাস্ত করব না। যদি কারও কোনও অভিযোগ থাকে আমাদের জানাবেন। কিন্তু, মারামারি করলে বরদাস্ত করব না। আমরা খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।” আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দলের কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “ইলামবাজারে ন’টা পঞ্চায়েতেই আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতব।’’ কিন্তু, তার জন্য যে দাওয়াই দিয়েছেন তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের অভিযোগ, ‘‘অনুব্রত আসলে নলহাটির পুরভোটের মতো গা-জোয়ারি করে ভোট করানোর কথাই বলতে চেয়েছেন।’’
ইলামবাজারে দলের অন্তঃকলহ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “ইলামবাজারের ঘটনাকে সমর্থন করি না। ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত, আমরা প্রশাসনকে বলেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আপনাদের যা জিজ্ঞাস্য থাকে, প্রশ্ন থাকে আপনারা সরাসরি করতে পারেন। আমি আপনাদের কাছে প্রথম থেকেই একই কথা বলে আসছি। আমরা এলাকায় শান্তি চাই।” ইলামবাজারে বেশ কিছু এলাকা যে এখনও অশান্ত, সেই কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, “আমার দুর্ভাগ্য যে পাঁচ বছরেও আমরা ইলামবাজারের কিছু কিছু জায়গায় শান্তি আনতে পারিনি। আবার এই মুহূর্তে আরও কিছু এলাকায় অশান্তির বাতাবরণ চলছে। আমরা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”