ট্রেনের গার্ড-বক্স বিদায়ে বিক্ষোভ হাওড়ায়

ট্রেন-সফরে সুরক্ষার অভাবে প্রায়ই যাত্রী-বিক্ষোভ হচ্ছে। হাওড়ামুখী জোধপুর এক্সপ্রেসে লুঠপাটের পরে মঙ্গলবারেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৯
Share:

স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে গার্ডদের বিক্ষোভ। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ট্রেন-সফরে সুরক্ষার অভাবে প্রায়ই যাত্রী-বিক্ষোভ হচ্ছে। হাওড়ামুখী জোধপুর এক্সপ্রেসে লুঠপাটের পরে মঙ্গলবারেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন যাত্রীরা। এ বার সুরক্ষার প্রশ্নে অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হলেন হাওড়া ডিভিশনের গার্ডেরাই। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সুরক্ষার সরঞ্জাম যে-বাক্সে থাকে, ট্রেনে গার্ডের কামরা থেকে সেই ‘গার্ড বক্স’ বা ‘লাইন বক্স’ই তুলে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

তারই প্রতিবাদে রেল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি বিক্ষোভে নেমেছেন গার্ডেরা। বুধবার হাওড়ায় স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ দেখান লোকাল, মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের এক দল গার্ড। তবে সেই বিক্ষোভের জন্য রেল পরিষেবায় কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। কেননা ওই গার্ডেরা নিজেদের কাজ শেষ করে এ দিনের ধর্নায় যোগ দেন।

কী এই ‘লাইন বক্স’?

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, ‘লাইন বক্স’ হল দেড় ফুট চওড়া এবং তিন ফুট উচ্চতার একটা লোহার বাক্স। ট্রেনে সেটি থাকে গার্ডের কামরায়। আর সেই বাক্সেই থাকে গার্ডদের সঙ্কেত দেওয়ার লাল আলো, যাকে বলা হয় ‘টেল ল্যাম্প’। থাকে একটি বড় টর্চ, দুর্ঘটনা ঘটলে পরের ট্রেনকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য ডিটোনেটর, সিগন্যাল দেখানোর লাল-সবুজ পতাকা, প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স, ওয়াকিটকি এবং যাত্রী-সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়
নানান জিনিস। অনেক কাজের কাজি বলেই ওই বাক্সকে বলা হয় গার্ডদের ‘রানিং অফিস’।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্ড বললেন, ‘‘এক জন গার্ড আসলে একটা ট্রেনের সুপারভাইজার। আর ‘লাইন বক্স’ হল তাঁর চলমান ব্যক্তিগত অফিস। সেটি কেড়ে নেওয়া হলে তো ট্রেনে যাত্রী-সুরক্ষার বিষয়টিকেই শিকেয় তুলে দেওয়া হয়!’’ মেল ট্রেনের এক গার্ডের বক্তব্য, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডিউটি করতে হয় তাঁদের। কাজের সরঞ্জাম ছাড়াও ওই বাক্সে থাকে ‘রুল-বুক’। সেই সঙ্গে থাকে নিজেদের খাবারদাবার, জামাকাপড়-সহ সব কিছুই। এগুলো না-থাকলে গার্ডেরা একটানা এত ঘণ্টা ডিউটি করবেন কী ভাবে, প্রশ্ন তুলেছেন ওই গার্ড। তিনি জানান, ওই বাক্স তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আটকাতেই এ দিনের অবস্থান-বিক্ষোভ। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন তাঁরা।

যে-বাক্স এত প্রয়োজন মেটায়, সেটি তুলেই বা দেওয়া হচ্ছে কেন?

পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত খরচ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত। টানাটানির সংসারে সাশ্রয় কীসে হয়, সেই রাস্তা খুঁজে চলেছে রেল। সেই জন্য আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে রেলের টাকা বহনের ব্যাগ। এ বার তুলে দেওয়া হচ্ছে গার্ড বক্স। আগে ওই বাক্স নিয়ে যাওয়ার জন্য কুলির ব্যবস্থা ছিল। খরচ কমাতে তাঁদের বসিয়ে দিয়ে ওই বাক্স বহনের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়। ওই বাক্স গার্ডদের কামরায় তুলে দেওয়ার জন্য শুধু হাওড়া শাখায় ৫৩ জন কর্মী আছেন। এতে রেলের বছরে তিন কোটি টাকা খরচ হয়। তা বাঁচাতে রেল বোর্ড বাক্সটাই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানাচ্ছেন কর্তারা। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখায় ওই বক্স তুলে দেওয়া হয়েছে আগেই।

বিক্ষোভকারী গার্ডেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই বাক্স তুলে দেওয়ার পিছনে রেল বোর্ডের কোনও ভূমিকাই নেই। কারণ, যাত্রী-সুরক্ষার জন্য রেলের আইনেই লাইন বক্স রাখার নির্দেশ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, শিয়ালদহে ওই বাক্স তুলে দেওয়ায় রেলের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাওড়া শাখার কয়েক জন আধিকারিক গার্ড বক্স তুলে দেওয়ার ব্যাপারে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই চাপান-উতোরের মধ্যে রেলকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ওই বাক্সের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে। এখন সিগন্যালের আলো দেখায় ডিজিটাল টর্চ। ‘রুল বুক’ থাকে মোবাইল ফোনেই। গার্ডদের খাবার বহনেরও দরকার নেই। সব স্টেশনে তার ব্যবস্থা আছে। সর্বোপরি রেলের সাম্প্রতিক সম্মেলনে গার্ড ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়ার কথা উঠেছে। সেখানে গার্ডদের ‘লাইন বক্স’ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে চমকে ওঠার কিছু নেই।

‘‘আপাতত শুধু লোকাল ট্রেনের লাইন বক্স তুলে দেওয়া হচ্ছে। মেল ও এক্সপ্রেসের গার্ড বক্স তুলে নেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি,’’ বলেন হাওড়ার ডিভিশনাল ম্যানেজার আর বদ্রীনারায়ণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement