মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় শর্ত সাপেক্ষে আগাম জামিন পেলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ-সহ পাহাড়ের ২৩ প্রথম সারির নেতানেত্রী। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, মামলার চার্জ গঠনের এক দিন আগে থেকে মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের এলাকার বাইরে তাঁরা যেতে পারবেন না। সে জন্য অনুমতি নিতে হবে তাঁদের। ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চার্জ গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারক অসীম কুমার রায় এবং মলয় মরুৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জুন মাসে অভিযুক্তরা কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন।
আদালত সূত্রের খবর, যেহেতু গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, সেই জন্য হাইকোর্ট আগাম জামিন মঞ্জুর হলেও গুরুঙ্গদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। হাইকোর্ট অভিযুক্তদের আগামী সাত দিনের মধ্যে কলকাতার সিটি সেশন কোর্টের চিফ জজের এজলাসে আত্মসমর্পণ করতে বলেছে। কারণ, ওই আদালত থেকেই বিমল গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। ওই মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিট ও অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। এই আদালতেই তামাঙ্গ হত্যা মামলার শুনানি চলছে। সিবিআই এই সময়ের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করলে তাকে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। এখন গ্রেফতার হয়ে ছাড়ের পর অভিযুক্তকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
এ দিন দুপুরে দার্জিলিং পাহাড়ে নেতাদের জামিনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতায় থাকার শর্ত নিয়ে মোর্চার অন্দরেও আলোচনা শুরু হয়। দলের সহকারী সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেছেন, ‘‘আমরা আদালতের সমস্ত নির্দেশ পালন করব। আগামী ১৭ জানুয়ারি চার্জ গঠন হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। কলকাতায় থাকার বিষয়টিও রয়েছে। আশা করছি, পরে এই শর্তটা কিছুটা লঘু করতে পারে আদালত।’’ নির্দেশ শোনার পর জাপের নেতা হরকা বাহাদুরও আদালতের নির্দেশে চলার কথা জানিয়েছেন। মোর্চাত্যাগী প্রদীপ প্রধান এখন তৃণমূলের কার্শিয়াঙের দলের চেয়ারম্যান। দলের পাহাড়ের সাধারণ সম্পাদক এনবি খাওয়াস বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু গুরুঙ্গ, রোশনরা কলকাতায় বসে থাকলে, জিটিএ-কে চালাবে। এটাও দেখতে হবে।’’
২০১০ সালের ২১ মে সাত সকালে সভার প্রস্তুতির সময় গোর্খা লিগের সভাপতি মদন তামাঙ্গকে ক্লাবসাইড রোডে কুপিয়ে খুন করা হয়। লিগের নেতা লক্ষ্মণ প্রধান সদর থানায় গুরুঙ্গ-সহ মোর্চা নেতাদের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথমে পুলিশ পরে সিআইডি-র হাতে মামলার তদন্তভার যায়। ওই বছরের শেষে তামাঙ্গের স্ত্রী, লিগের সভানেত্রী ভারতীদেবী হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে সিবিআই খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করে। কিছু দিন মধ্যে সিবিআই প্রথম চার্জশিট জমা দিলেও তাতে গুরুঙ্গদের নাম ছিল না। ২০১৫ সালের মে মাসে ভারতীদেবী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিছু দিনের মধ্যে গুরুঙ্গ-সহ প্রথম সারির মোর্চা নেতাদের নাম দিয়ে সিবিআই আরেকটি চার্জশিট দাখিল করে দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশর পর ভারতীদেবী শুধু বলেছেন, ‘‘কোর্টের নির্দেশ খতিয়ে দেখার পরেই মন্তব্য করব।’’