বালুরঘাট থেকে অন্যের নামে পোস্ট পেড সিম-কার্ড তুলে মুম্বইয়ের ‘কল সেন্টার’-এ তা ব্যবহার করে গ্রাহকদের পরিষেবা দিয়ে হবিবুর টাকা নিতেন বলে অভিযোগ। কিন্তু, মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে কখনও বিল দেননি তিনি। সিম-কার্ডের ‘অফার’ একমাস পরে ফুরোতেই টনক নড়ে মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার। মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার দাবি, ওই সব সিম থেকে ‘কনফারেন্স কল’ করে মরক্কো, দুবাই, সিরিয়া, তুরস্কে দীর্ঘ কথাবার্তা বলায় ২ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সংস্থাটি। সিআইডির সন্দেহ, দীর্ঘ সময় বিদেশে কথা বলার আড়ালে কোনও জঙ্গি যোগসাজশ থাকতে পারে। ওই চক্রের পান্ডা সন্দেহে ধৃত হবিবুর ওরফে হাবিব মন্ডলকে জেরা করছে সিআইডি।
পুলিশ সূত্রের খবর, কোথায় ফোন করা হয়েছে তা স্পষ্ট হলেও কেন, কী কথা হয়েছে সেই ব্যাপারে হবিবুর কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।
যদিও তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির সন্দেহ, হবিবুর আরও বড় কোনও চাঁইকে আড়াল করতে মিথ্যে বলছে। কারণ, ওই সব সিম থেকে মরক্কো, অস্ট্রিয়া, মরিসাস, সিরিয়া, দুবাইয়ে দীর্ঘ সময় কথা চালাচালির প্রমাণ সিআইডির হাতে রয়েছে। যে বেসরকারি সংস্থা মোবাইল সংস্থা বিল না পেয়ে ওই অভিযোগ করেছে, তাদের তরফেই সব ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থাটি দু’কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করলেও তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন গোয়েন্দারা। সে জন্য ওই সংস্থার এক কর্তাকে বালুরঘাটে তলব করেছে সিআইডি। তদন্তকারী অফিসারদের একজন জানান, শীঘ্রই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
গত ১৯ জুন রাতে মুম্বইয়ের চেম্বুর এলাকা থেকে হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়। ৩২ বছর বয়সী হাবিব আদতে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা। গত ৮-৯ বছর ধরে সে মুম্বইতে থাকে। মুম্বইতে সে একটি কল সেন্টার চালায় বলে জানা গিয়েছে। মাঝে মধ্যে হিলিতে তার যাতায়াত ছিল। মুম্বইয়ে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে বলে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত হাবিবুর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিচিত যুবকদের মোটা রোজগারে শ্রমিকের কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে সে এলাকা থেকে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মুম্বই নিয়ে যায়। ওই সিমগুলি থেকে কারা বিদেশে কাদের সঙ্গে কথা বলতো তা জানতে ধৃত হাবিবুরকে জেরা করছেন গোয়েন্দারা। সিআইডির তদন্তকারী অফিসার সুরজ ঠাকুর এদিন জানান, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিন হিলির কৃষ্ণপুর এলাকায় বাসিন্দা ধৃত হাবিবুরের আত্মীয়রা তার গ্রেফতারের খবর শুনে অবাক হন। হাবিবুরের বাবা হাফিজুদ্দিন মন্ডল তিন বছর আগে মারা গিয়েছেন। তার দুইভাই শ্রমিকের কাজ করেন। তার ছোট ভাই হামিদ মন্ডলের কথায়, দাদা ছোট থাকতে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছিল। বছর তিনেক আগে একবার বাড়ি এসেছিল। তারপর থেকে ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। মুম্বইয়ে কী করতো তাদের জানা নেই। প্রতিবেশিদের দাবি, সে সময় হিলি এবং কুমারগঞ্জ এলাকা থেকে বেশকিছু যুবককে কাজের টোপ দিয়ে অন্তত ১০ থেকে ১২টি সিম সে সংগ্রহ করেছিল।
২০১২ সালের ২২ মার্চ হিলি থানায় ওই মোবাইল সংস্থার দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গিয়েছে, বিশেষ ছাড়ের ওই সিম হস্তান্তর করা যাবে না বলে শর্ত ছিল। কিন্তু হিলি এলাকার বদলে ওই সিমগুলি মুম্বই, উত্তর প্রদেশ থেকে ব্যবহার হচ্ছে জানতে পেরে টনক নড়ে ওই মোবাইল সংস্থার। মাত্র এক-দেড় মাসের মধ্যে মরক্কো, অস্ট্রিয়া, মরিসাস, সিরিয়া, দুবাইয়ের মতো একাধিক দেশে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে আইএসডি ফোন করায় সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। সংস্থার তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়, মিনিটে আইএসডি কলের জন্য যেখানে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্টিনেশন বাবদ ৪৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা টেলিকম্যুনিকেশন অপারেটর চার্জ তাদের দিতে হয়। সেখানে মিনিটে ৯ টাকা ছাড়ের সুযোগ নিয়ে লাগাতার কথা বলায় তাদের ওই বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ওই বেসরকারি মোবাইল সংস্থার কলকাতার কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুনির্মল পাত্র হিলি থানায় সিমের মালিকদের নামে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই হিলি থানার পুলিশ ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে একমাসের মধ্যে যাদের নামে সিম তোলা হয়েছিল, তাদের ৬ জনকে গ্রেফতার করে। গত জানুয়ারিতে মামলাটি সিআইডির হাতে যায়।