(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। তাপসী মণ্ডল (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
রাজ্য বিজেপিতে আবার ‘ধাক্কা’। বস্তুত, এ বার সরাসরি ‘ভাঙন’ শুভেন্দু অধিকারীর ঘরেই। ভোটের প্রস্তুতিতে এক বছর আগে থেকেই কোমর বাঁধা শুরু হচ্ছে বলে যখন দাবি করছে বিজেপি, তখন দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে গেলেন তাদের বিধায়ক। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বিজেপি ছেড়ে সোমবার তৃণমূল ভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শাসকশিবিরে যোগ দিলেন।
তৃণমূল ভবনে সোমবার বিকেলে তাপসীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পাঁচ বছরের মধ্যেই বিজেপি-ত্যাগ প্রসঙ্গে তাপসী বলেন, ‘‘বিভাজনের রাজনীতি চলছে। দেখতে পাচ্ছি মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করছেন। আমার পক্ষেও এই রাজনীতি মেনে নেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছিল।’’ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ হিসাবে তাপসী হলদিয়ার উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেন। তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও আঙুল তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘ওঁর মাধ্যমেই আমাকে কোণঠাসা করা হচ্ছিল। বাইরে থেকে এসে সকলের সঙ্গে বিরোধিতায় জড়াচ্ছেন।’’
সোমবার তৃণমূল ভবনে তাপসীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন অরূপ বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত।
তাপসীর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার অন্য ‘রাজনৈতিক তাৎপর্য’-ও রয়েছে। প্রথমত, তাপসী শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন পরিষদীয় দলের সদস্য। দ্বিতীয়ত, তিনি শুভেন্দুর নিজের জেলার নেত্রী এবং বিধায়ক। তাপসী একটা সময়ে ছিলেন সিপিএমে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যখন গোটা রাজ্যে তৃণমূলের জয়জয়কার, সেই নির্বাচনে তাপসী কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হিসেবে হলদিয়া আসনটিতে জেতেন। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের তরফে শুভেন্দু নিজে তখন হলদিয়া ‘দেখভাল’ করতেন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও সিপিএমের হয়ে জিতেছিলেন তাপসী।
তার পরে তিনি সেই শুভেন্দুর হাত ধরেই দলবদল করেন। শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান। তাপসী বিজেপিতে যান সিপিএম ছেড়ে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাপসী হলদিয়া থেকে বিজেপির টিকিটে লড়েন। আবার জয়ী হন। এত দিন শুভেন্দুর ‘ঘনিষ্ঠ’ বৃত্তেই তাঁকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শুভেন্দু ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর ক্রমশ চড়াচ্ছেন, তখন তাঁর ‘আস্থাভাজন’ তাপসীই দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে গেলেন। বিরোধী দলনেতার জন্য এই ভাঙন ‘অস্বস্তিজনক’ বলেই মনে করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে, ‘উল্লসিত’ তৃণমূল শিবির বলছে, তারা শুভেন্দুর ‘ঘর’ ভেঙে দিয়েছে।
২০২১ সালের বিধানসভা এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে বিজেপি পর্যুদস্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গে বিজেপির অবস্থা কিছুটা ‘সম্মানজনক’ হলেও গোটা দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির শোচনীয় পরাজয় দেখা গিয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল শুধু শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। বিধানসভা এবং লোকসভা— দু’টি নির্বাচনেই ওই জেলায় তৃণমূলকে পিছনে ফেলেছিল বিজেপি। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পরাজিত হয়েছিলেন নন্দীগ্রামে। সেই জেলাতেই তৃণমূল ‘প্রত্যাঘাত’ করল বলে দাবি শাসক শিবিরের। দক্ষিণবঙ্গে যে জেলাকে বিজেপির ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছিল, সেখানেই তৃণমূল ভাঙন ধরিয়ে দিল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, তাপসীর এই দলবদলের নেপথ্যে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তন্ময় ২০২১-এর ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারাভিযানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনিই তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্প্রতি তাপসীর যোগাযোগ করান। রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও শুভেন্দুর ‘দুর্গে’ হানা দেওয়ার এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।