টক্সো রিঙ্কাইটিস

এডিসখেকো ‘বন্ধু’ মশার বাস রাজভবনে

তারাও মশা। তবে ক্ষতি করে না, উল্টে উপকারে আসে। ডিম ফুটে বেরিয়েই তারা রোগের বাহক অন্য গোত্রের মশার বংশ ধ্বংস করে। উদরস্থ করতে থাকে অপকারী মশার লার্ভা। এ হেন ‘উপকারী’ মশার অস্তিত্ব এই প্রথম কলকাতায় মালুম হল। তার ডেরার খোঁজ মিলল রাজভবন চত্বরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

তারাও মশা। তবে ক্ষতি করে না, উল্টে উপকারে আসে। ডিম ফুটে বেরিয়েই তারা রোগের বাহক অন্য গোত্রের মশার বংশ ধ্বংস করে। উদরস্থ করতে থাকে অপকারী মশার লার্ভা।

Advertisement

এ হেন ‘উপকারী’ মশার অস্তিত্ব এই প্রথম কলকাতায় মালুম হল। তার ডেরার খোঁজ মিলল রাজভবন চত্বরে।

ডেঙ্গি মশার আস্তানা আছে কিনা যাচাই করতে বুধবার রাজভবনের বাগানে গিয়েছিল পুরসভার দল। দেখা যায়, বাঁশঝাড়ে কেটে নেওয়া বাঁশের কোটরে বৃষ্টির জল জমেছে, যাতে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। সেগুলোর মধ্যে ডেঙ্গিবাহক এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা যেমন রয়েছে, তেমন এডিসখেকো মশা টক্সো রিঙ্কাইটিসের লার্ভাও আছে!

Advertisement

শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে এমন ‘আবিষ্কার’ বিশেষজ্ঞদের কিছুটা অবাকই করেছে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘বাঁশঝাড়ে একটা জলভর্তি কোটরে বড় আকারের মশার লার্ভা দেখলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, ওগুলো যে টক্সো রিঙ্কাইটিস! কারণ, শহুরে পরিবেশে এই মশা সাধারণত দেখা যায় না।’’

দিন কয়েক আগে রাজভবনের স্টাফ কোয়ার্টার্সে ডেঙ্গি সংক্রমণ ঘটেছে। রোগের উৎস খুঁজতে এ দিন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের নেতৃত্বে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ-সহ ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম’ রাজভবনে অভিযান চালায়। সঙ্গে ছিলেন রাজভবনের যুগ্মসচিব পর্যায়ের এক অফিসার।

সেখানেই অপেক্ষা করছিল চমক। অতীনবাবু জানান, বাঁশের জঙ্গলে কাটা বাঁশের গোড়ায় জমে থাকা জলে মশার লার্ভা মিলেছে। একটা কোটরে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা ছিল। অন্য কয়েকটা কোটরে টক্সো রিঙ্কাইটিসের লার্ভা। ‘‘বিরল ওই প্রজাতির মশাগুলো প্রথম দশাতেই এডিস ইজিপ্টাই-সহ অন্য মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে। তাই ওরা বন্ধু মশা।’’— মন্তব্য মেয়র পারিষদের। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমরা আসার আগে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভার কোটরে টক্সো রিঙ্কাইটিসের লার্ভা রেখে এসেছি।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অন্য মশার লার্ভা সাধারণত দু’-তিন দিনের মধ্যে পিউপায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ‘বন্ধু’ মশার লার্ভা পিউপায় পরিণত হতে সময় নেয় ২৫-২৮ দিন। এবং টক্সো রিঙ্কাইটিসের প্রতিটি লার্ভা রোজ অন্য মশার ৪০-৫০টি লার্ভা খেয়ে নেয়। তাই এডিস ইজিপ্টাইয়ের আড্ডায় রিঙ্কাইটিসের লার্ভা ফেলে পুরসভা দেখতে চাইছে, ডেঙ্গি-মশার বংশ কতটা ধ্বংস হল।

ডেঙ্গির প্রকোপ কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে মারমুখী হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় কলকাতায় এমন উপকারী মশার প্রজননের ইঙ্গিত পেয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ কিছুটা আশান্বিত। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘রিঙ্কাইটিসের দৌলতে রাজভবনে ডেঙ্গিবাহী এডিস ও ম্যালেরিয়াবাহী অ্যানোফিলিস মশার রমরমা কমতে পারে।’’ রিঙ্কাইটিসকে আরও ব্যাপক হারে এ কাজে লাগানো যায় কিনা, বিশেষজ্ঞেরা তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন অতীনবাবু। পতঙ্গবিদেরা অবশ্য বলছেন, ল্যাবে বসে রিঙ্কাইটিসের প্রজনন ঘটানো যায় না। ‘‘তবে কলকাতার বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে তারা বেশি হারে জন্মালে বিলক্ষণ লাভ হবে।’’— মন্তব্য এক পতঙ্গবিদের।

বস্তুত এই মুহূর্তে রাজ্যে বন্ধু মশার প্রজননক্ষেত্র খুবই সীমিত। সেই সুযোগে শত্রু মশার বাড়বাড়ন্ত। রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার পার। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের মুখে কুলুপ! গত ক’দিন হল, দফতরের তরফে ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারি তরফে ‘মুখপাত্র’-এর দায়িত্ব বর্তেছে যাঁর উপরে, রাজ্যের সেই স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়ে দিয়েছেন, ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশ আপাতত সম্ভব নয়। কেন নয়, সে ব্যাখ্যা যদিও তাঁর কাছে মেলেনি।

পাশাপাশি অজানা জ্বরও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বহু জায়গায়। যেমন পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল ব্লকের শিলা রাজনগর গ্রামে। এ দিন স্বাস্থ্য-আধিকারিকেরা ওখানে গিয়েছিলেন। শিবির বসিয়ে রক্তের নমুনা নেওয়া চলছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কুড়ি জনের ব্লাড স্যাম্পল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন