Amit Shah

Amit Shah: ইনসুলিন নিলেন, আবার শাহি-ভোজে মিষ্টি দইও খেলেন অমিত, দাদার মনোভাব জানলেন কি?

অমিত শাহ তাঁর ‘রাজনৈতিক টিম’ নিয়েই মহারাজের দরবারে গিয়েছিলেন।উদ্দেশ্য ছিল একটাই বার্তা দেওয়া— সৌরভ তাঁদের পছন্দের মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২২ ১৫:৩২
Share:

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে শুক্রবার নৈশভোজে নিয়ে এক ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ছিলেন সপার্ষদ অমিত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এমনিতেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি। মিষ্টি খাওয়া বারণ। মধুমেহ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয় তাঁকে। কিন্তু শুক্রবার শাহি-ভোজে মিষ্টি দই খেয়েছেন অমিত শাহ। তবে ওইটুকুই। তাঁর এবং তাঁর সঙ্গী রাজনীতিকদের পাতে বাকি যে মিষ্টান্ন সাজিয়ে দিয়েছিলেন বেহালার গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার, স্বাস্থ্যের কারণেই তার একটিও ছুঁয়ে দেখেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে শুক্রবার নৈশভোজে নিয়ে এক ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ছিলেন সপার্ষদ অমিত। দু’জনের একান্তে কোনও কথা হয়নি। তবে সোফায় অমিতের পাশেই বসেছিলেন সৌরভ। দু’জনে কিছু কথাবার্তাও হয়েছে। তবে তা রাজনীতি সংক্রান্ত নয় বলেই অসমর্থিত সূত্রের দাবি। সাধারণ ভাবে কথা হয়েছে অমিতের করোনা আক্রান্ত হওয়া নিয়ে। খানিকটা পারিবারিক কুশলাদিও বিনিময় হয়েছে। বস্তুত, বিজেপি সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ওই আলোচনায় সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৌরভকে বলেন, প্রথম বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সময় (অমিতের দু’বার করোনা হয়েছিল) তিনি যথেষ্ট বিপন্ন বোধ করেছিলেন। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় তাঁর ‘কোমর্বিডিটি’ ছিল। বস্তুত, সেই সময়েই নাকি অমিতের খেয়াল পড়ে, তাঁর ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়া হয়নি। তখন তাঁর এক সফরসঙ্গী এসে তাঁকে ইঞ্জেকশনটি দিয়ে যান। তবে তার পরেও অমিত মিষ্টি দই খান। মিষ্টি ছাড়া অন্য প্রায় সব পদই তিনি তৃপ্তি করে খেয়েছেন বলেই রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর।

Advertisement

প্রসঙ্গত, অমিত সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজে আসছেন শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘ওঁকে ভাল করে বাংলার দই-রসগোল্লা খাওয়ানো উচিত।’’ রসগোল্লা না খেলেও দই খেয়েছেন অমিত। ওয়াকিবহাল এক নেতার দাবি, অমিতের দুই নাতনির জন্য দু’হাঁড়ি দইও নাকি দিয়ে দিয়েছেন সৌরভ। নৈশভোজ এবং খোশগল্প সেরে রাতে সপারিষদ বেরিয়ে দিল্লির বিমান ধরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কোনও পক্ষই ওই সাক্ষাতে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে চায়নি। প্রাধান্য দেওয়া দূরস্থান, রাজনীতি আনতেই চায়নি। সৌরভ যেমন বলেছেন, তিনি দীর্ঘদিন অমিত শাহকে চেনেন। অমিত-তনয় জয় শাহ ভারতীয় বোর্ডে তাঁর সহকর্মীও বটে। সেই সৌজন্যের খাতিরেই তাঁর বাড়িতে অমিতের নৈশভোজে আমন্ত্রণ। একই কথা অমিতও তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন বলে অসমর্থিত সূত্রের খবর। কিন্তু অমিতের সঙ্গে যাঁরা সৌরভের বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ‘অরাজনৈতিক’ একজনও ছিলেন না। প্রথমে ঠিক ছিল, অমিতের সঙ্গে নৈশভোজে যাবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত (একটি সূত্রের খবর, স্বপনই নৈশভোজের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কোনও পক্ষই সেই প্রস্তাবে ‘না’ বলেনি)। বাস্তবে দেখা গেল সেই দলে রয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মুজমদার এবং দলের প্রথমসারির নেতা অমিত মালবীয়রাও। ফলে শাহ যে তাঁর ‘রাজনৈতিক টিম’ নিয়েই মহারাজের দরবারে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এবং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল একটাই বার্তা দেওয়া— সৌরভ তাঁদের পছন্দের মানুষ।

সেই সূত্রেই প্রশ্ন এবং জল্পনা— সৌরভের মনোভাবের কোনও আঁচ কি পেলেন বিজেপির এই শীর্ষনেতা?

Advertisement

একেবারে বিনা কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম শীর্ষনেতা যে সৌরভের বাড়িতে যাবেন না, সেটা সহজবোধ্য। অমিতের ঘনিষ্ঠরা জানেন, তিনি সাধারণত অত বিশ্রম্ভালাপের মানুষ নন। একেবারেই নিছক কারও বাড়ি বয়ে গিয়ে গল্পগুজব করে আসবেন, অমিতের ক্ষেত্রে সেটা অত্যন্ত বিরল ঘটনা (বিশেষত, যখন রাজ্যে তাঁর দু’দিনের সফরসূচি ছিল কর্মসূচিতে ঠাসা। সঙ্গে যোগ হয়েছিল কাশীপুরে নিহত দলীয় কর্মীর বাড়িতে যাওয়া)। দলবল নিয়ে গেলেও অমিত সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গীদের অন্য ঘরে অপেক্ষারত রেখে নিজে একান্তে কথা বলে থাকেন। বিজেপি সূত্রে যতদূর জানা যাচ্ছে, শুক্রবার সন্ধ্যাতেও তেমনই কিছু পরিকল্পনা ছিল। ঠিক ছিল, শুভেন্দু-সুকান্তরা নৈশভোজের আগে এক তলায় বসবেন। অমিত-সৌরভ কথা হবে দোতলায়। শেষপর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্ভবত সময় সঙ্কোচনের কারণেই।

কিন্তু এটা অনস্বীকার্য যে, সৌরভ বিজেপির দরজা একেবারে বন্ধ করতে চাইবেন না। তার একটি কারণ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের রাজনীতি। অমিতের ‘হস্তক্ষেপ’-ই যে শেষ মুহূর্তে সৌরভের অনুকূলে ম্যাচ ঘুরিয়েছিল, তা জানে গোটা দেশ। নইলে কর্ণাটকের ব্রিজেশ পটেল ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি প্রায় হয়েই গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ভারতীয় ক্রিকেটমহলে ইদানীং এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ভারতীয় ক্রিকেট অমিত-তনয় জয় এবং সৌরভের দু’টি আলাদা শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই সৌরভ অমিতকে জানাতে চাইবেন, বিষয়টা তেমন নয়। বস্তুত, জয়-সৌরভ সম্পর্ক ‘খারাপ’ নয়। তবে কিছু প্রশাসনিক বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বলেই বোর্ড সূত্রের বক্তব্য। আবার সেই সূত্রেও এ-ও বক্তব্য, প্রশাসন চালাতে গেলে মাঝেমধ্যে এমন ঠোকাঠুকি লাগা আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়। প্রকাশ্যে অবশ্য জয়-সৌরভের ভিন্নমতের কোনও চিহ্ন কখনওই দেখা যায়নি। বরং উল্টোটাই দেখা গিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সৌরভ সামগ্রিক ভাবে রাজনীতির দরজাও একেবারে বন্ধ করে দিতে চাইবেন না। গত বিধানসভা ভোটের সময় সৌরভ জানিয়েছিলেন তিনি রাজনীতিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক নন। কারণ, তার আগে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের ‘মুখ’ করে বিজেপি ভোটের ময়দানে নামতে চেয়েছিল। সে বিষয়ে কথাবার্তা অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে সৌরভ জানিয়ে দেন, তিনি রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন। তবে পাশাপাশি এ-ও সত্য যে, সৌরভ কখনওই বলেননি, তিনি কোনওদিনই রাজনীতিতে যোগ দেবেন না। বরং তাঁর কথায় ভবিষ্যতে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইঙ্গিতই অনেকে দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি যে রাজনীতিতে কখনও আসবেন না, তেমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা সৌরভ তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছেও কখনও বলেননি। বরং রাজ্য এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে তাঁর যথেষ্ট উৎসাহ এবং কৌতূহল আছে বলেই শোনা যায়।

এমতাবস্থায় বিজেপি নেতাদের নিয়ে অমিতের সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজ করা যে একেবারে ‘অরাজনৈতিক’, তা মেনে নিতে চাইছেন না কেউই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন