সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
১৯৯৪ সাল। তাদের প্রথম শিল্পনীতি ঘোষণা করল বামফ্রন্ট সরকার। জোর দেওয়া হল বড় শিল্প আর বিদেশি লগ্নির উপরে। পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সিআইআইয়ের প্রাক্তন ডিজি তরুণ দাসের মতে, তাঁর ওই পদে নিয়োগ রাজ্যের পক্ষে একটি সন্ধিক্ষণ। তাঁর কথায়, ‘‘বাম সরকার যখন শিল্প ও লগ্নি ফেরাতে চাইল, শিল্পমহলকে আস্থা জোগাতে তিনিই ছিলেন তার যোগ্য অ্যাম্বাসাডর।’’
শিল্প মহলের আস্থা বেশ খানিকটা অর্জন করতে পেরেছিলেন সোমনাথবাবু। হলদিয়া পেট্রোকেমের মালিকানা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে শিল্পপতি পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দ্বৈরথের শুরু বাম আমলেই। সোমনাথবাবুর মৃত্যু সংবাদ শুনে এহেন পূর্ণেন্দুবাবুর মন্তব্য, ‘‘এক জন অত্যন্ত শুভাকাঙ্খীকে হারালাম। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের কঠিন সময়ে হাল না ছেড়ে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।’’
সোমনাথবাবুর নেতৃত্বেই ১৯৯৯ সালে রায়চকে প্রথম বড় করে শিল্প সম্মেলন হয় রাজ্যে। সেই সময় রাজ্যের ভাবমূর্তির সমস্যার কথা বলতে দ্বিধা করেননি তিনি। তৎকালীন শাসক ফ্রন্টেরই একাংশ যখন লগ্নিকারীকে বাধা দিয়েছেন, তখন সোমনাথবাবু প্রয়োজনে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করতেন, জানালেন প্রবীণ শিল্পপতি গৌরব স্বরূপ। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দেওয়া দায়িত্বে পালনে দায়বদ্ধ ছিলেন সোমনাথবাবু।
শিল্পোন্নয়ন নিগমের তৎকালীন এমডি তথা মিৎসুবিশি কেমিক্যালসের প্রাক্তন এমডি দেবীপ্রসাদ পাত্রেরও দাবি, ‘‘তিনিই ছিলেন লগ্নিকারীদের কাছে রাজ্যে বদলের বার্তা দেওয়ার প্রতীক।’’
তবে সোমনাথবাবুর চলার পথ নিষ্কণ্টক ছিল না। দলের ভিতর থেকে বাধা পেয়েছেন। তাঁর আমলে বিপুল সংখ্যায় মউ স্বাক্ষর বা বিদেশে শিল্প-সফর নিয়েও কটাক্ষ করেছেন অনেকেই। কিন্তু শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়ার কথায়, ‘‘মউয়ের চেয়েও বড় রাজ্যের ভাবমূর্তির উন্নতি। তাতে তিনি সফল।’’