মাসখানেক আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল, সরকারি চিকিৎসকদের ছুটি অনুমোদনের বিষয়টি এ বার থেকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বদলে সরাসরি দেখবেন স্বাস্থ্যসচিব।
তার কিছু দিনের মধ্যেই, গত ১৯ জানুয়ারি রাজ্যের নতুন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অন্য একটি নির্দেশ জারি করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, জেলায় জেলায় চিকিৎসকদের ‘ডিটেলমেন্ট’ (এক হাসপাতালের চিকিৎসককে অন্য হাসপাতালে কাজ করতে পাঠানো)-এর অধিকার এ বার থেকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার বদলে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের হাতে থাকবে।
অর্থাৎ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের ক্ষমতা কমানো হচ্ছে। ক্রমেই কেন্দ্রীভূত প্রশাসন-পন্থী হয়ে উঠছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
এক জন চিকিৎসক বিশেষ একটি হাসপাতাল থেকে মাইনে পান। কিন্তু তাঁকে অনেক সময়েই কাজ করতে পাঠানো হয় অন্য হাসপাতালে। প্রশাসনিক পরিভাষায় এটাই ‘ডিটেলমেন্ট’। বিভিন্ন জেলায় যত জন মেডিক্যাল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডিটেলমেন্টে নিয়োগ করা হয়েছে, নির্দেশ প্রত্যাহার করে তাঁদের প্রত্যেককে নিজের নিজের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা যদি মনে করেন যে, কোনও জায়গায় কাউকে ডিটেলমেন্টে নিয়োগ করা দরকার, তা হলে তাঁকে প্রথমে স্বাস্থ্য ভবনে ডিরেক্টরেটে বিষয়টি জানাতে হবে। ডিরেক্টরেট সেই প্রয়োজন যথাযথ মনে করলে সেখানে চিকিৎসক পাঠানো হবে।
এই নির্দেশের পরে অনেক জেলাতেই সিএমওএইচ বা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার রাতের ঘুম কার্যত উড়ে গিয়েছে। কারণ রাতারাতি ডিটেলমেন্ট থেকে লোক ফিরিয়ে আনলে অনেক জায়গাতেই পরিষেবা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে। এই সমস্যার কথা জেনে স্বাস্থ্য ভবন অবশ্য জানিয়েছে, যেখানে ডিটেলমেন্ট একান্তই অপরিহার্য, সেখান থেকে এখনই লোক না-তুলে সেখানে চিকিৎসক রাখার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্য ভবন সেই কার্যকারণ যথার্থ মনে করলে জরুরি ভিত্তিতে সেখানে লোক দেবে। সিএমওএইচ-দের বলে দেওয়া হয়েছে, নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কোথাও যাতে পরিষেবা ভেঙে না-পড়ে, সে-দিকে নজর দিতে হবে। ‘‘তবে এই নির্দেশের দরকার ছিল। কারণ, স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে না-জানিয়ে বা তাঁর অনুমতির তোয়াক্কা না-করে অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনে অনেক চিকিৎসককে ডিটেলমেন্টে পাঠানো হচ্ছিল। পুরো প্রক্রিয়াটিতে নিয়মানুবর্তিতা আনার দরকার ছিল,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়বাবু।
স্বাস্থ্য ভবনের সূত্রের খবর, জেলার কোনও জায়গায় নিয়োগের পরে এক শ্রেণির চিকিৎসক নিজের স্বার্থে অন্য কোথাও থাকতে চাইতেন। তাঁদের কেউ কেউ সিএমওএইচ-দের উৎকোচ বা অন্য কিছু সুবিধার টোপ দিয়ে অপ্রয়োজনে পছন্দের জায়গায় নিজের ডিটেলমেন্ট করিয়ে নিতেন। স্বাস্থ্য পরিষেবায় এ বার এই ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে চাইছে স্বাস্থ্য ভবন।
কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য ভবন রাজ্যের সরকারি চিকিৎসক ও নার্সদের ডেটা বেস তৈরি করেছে। ৩১ জানুয়ারি তা প্রকাশ করার কথা। এর মাধ্যমে কম্পিউটারে একটি চাবি টিপে রাজ্যের কোথায় কোন সরকারি ডাক্তার বা নার্স রয়েছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা— সবই জানা যাবে। এ বার ডিটেলমেন্ট প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকার বুঝে নেবে, কোন জায়গায় প্রকৃতপক্ষে কত লোক রয়েছে বা কোথায় জায়গা অনেক খালি আছে। ডেটা বেস দেখে নার্স ও ডাক্তারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী খালি জায়গায় পাঠানো হবে। এই ভাবে মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।