অচেনা আষাঢ়ে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা আজও

বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রায় কিছুটা রাশ পড়লেও পড়তে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি

খামখেয়াল অব্যাহত প্রকৃতির। শেষ নেই মানুষের দুর্গতিরও।

Advertisement

মঙ্গলবার ঝলসানো দুপুরের পরে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও নামল বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কোনও রকম স্বস্তির বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ দিনও কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ছয় ডিগ্রি বেশি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, আজ, বুধবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ বইতে পারে। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তার তীব্রতা বেশি হবে। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রায় কিছুটা রাশ পড়লেও পড়তে পারে।

এখনও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না-মিললেও অন্তত দু’টি মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে এই আষাঢ়ু দহনের নাম। দুপুরে রবীন্দ্র সরণির ফুটপাত থেকে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, পেশায় ভিক্ষুক ওই ব্যক্তি প্রবল গরমে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এ দিনই বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় একশো দিনের প্রকল্পে সেচখাল সংস্কারের কাজ চলছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বসে পড়েন তারাপদ মাঝি (৪০) নামে ভেদুয়ার এক শ্রমিক। তাল়ড্যাংরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাঁকুড়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “সান স্ট্রোকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে কি না, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার আগে তা বলা সম্ভব নয়।”

Advertisement

গ্রীষ্মে কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলেই হাওয়া অফিস তাকে বলে তাপপ্রবাহ। পাঁজিতে আষাঢ়, কিন্তু দুবলা মৌসুমি বায়ুর জন্যই এই ভোগান্তি। মরসুমের গোড়াতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে বর্ষা। ফলে উত্তর ও মধ্য ভারত থেকে গরম হাওয়া ঠেলে ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গে। তার জেরে জুনেও এমন তাপপ্রবাহের দাপট। বর্ষা ঢোকার পরেও গরমের এমন দাপট শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না প্রবীণ আবহবিদেরাও। হাওয়া অফিসের নথি ঘেঁটে এক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘১৯২৪ সালের ১ জুন কলকাতার তাপমাত্রা প্রায় ৪৪ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। এ-পর্যন্ত মহানগরীতে সেটাই সর্বাধিক।’’

আরও পড়ুন: এবার গরমে কেন এত কষ্ট, কারণ জানেন?

প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে বর্ষা যদি ঢুকেই থাকে, সে গেল কোথায়? কারও কারও প্রশ্ন, বর্ষা গা-ঢাকা দিয়ে থাকলে এ দিন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশে বৃষ্টি হল কেন?

কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বিহার থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার প্রভাবেই এই বৃষ্টি।’’ আবহবিদদের ব্যাখ্যা, ওই অক্ষরেখার জন্যই বিকেলের পরে বাতাসে কিছুটা জোলো ভাব বেড়েছে। ফলে তাপমাত্রাতেও কিছুটা লাগাম পড়েছে। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে।

কিন্তু এই বিক্ষিপ্ত ও ক্ষণিক সুখে মোটেই খুশি নন দক্ষিণবঙ্গবাসী। তাঁদের প্রশ্ন, বর্ষা কি তা হলে এ বার এমন গা-ঢাকা দিয়েই থাকবে?

দিল্লির মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্ষা সক্রিয় হওয়ার পিছনে কাজ করে ভারত মহাসাগরের আবহাওয়ার পরিস্থিতি। সেই পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলেই বর্ষা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে ভারত মহাসাগরের পরিস্থিতি অনুকূল হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফলে বর্ষা ফের চাঙ্গা হওয়ারও ইঙ্গিত মিলছে। ‘‘২৩ থেকে ২৫ জুন অর্থাৎ শনি থেকে সোমবারের মধ্যে মৌসুমি বায়ু ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। বর্ষা ছড়িয়ে পড়তে পারে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে,’’ বলেন সঞ্জীববাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন