বুধবার আদালতে স্বস্তি পেয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার পেলেন মদন মিত্র।
এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, আপাতত জেলের বাইরেই থাকবেন মদন মিত্র। ঠিক যেমন বুধবার সারদা মামলায় অভিযুক্ত কুণালকেও আপাতত বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
সারদা-মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে গত ৯ সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলা আদালত অন্তর্বর্তিকালীন জামিন দিয়েছিল। সেই জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়ে পুজোর আগেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে সিবিআই। হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তাপস মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার সেই মামলারই শুনানি ছিল।
মদনবাবুর পক্ষে তাঁর আইনজীবী জানান, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জেলে গিয়ে তাঁর মক্কেলকে শেষ বারের মতো জেরা করে সিবিআই। তার পরে আর জেরা করা হয়নি। মদনবাবু জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে সিবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন কি না— জানতে চায় আদালত। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি সহযোগিতা করছেন। এর মধ্যে ১০ বার তিনি সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিয়েছেন। শুনানি শেষে সিবিআই-এর আবেদন খারিজ করে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ।
বুধবার কুণালের মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অন্তর্বর্তিকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানায় সিবিআই-ই। কিন্তু, এ দিন মদনবাবুর জামিন বাতিল করার পক্ষে সওয়াল করেন সিবিআই-এর আইনজীবী কে রাঘবচারিলু। আলিপুর আদালতের বিচারকের রায়কে ‘অবৈধ’ ও ‘খেয়ালখুশি’ এবং ত্রুটিপূর্ণ বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করেন তিনি। সওয়ালে রাঘবচারিলু জানান, কোন নতুন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভিযুক্তকে জামিন দিতে বিচারক বাধ্য হচ্ছেন, তা তিনি তাঁর রায়ে জানাননি। সেই কারণেই ৯ সেপ্টেম্বরের রায় অবৈধ এবং তা বিচারপতির মর্জিমাফিক হয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চ রাঘবচারিলুর কাছে জানতে চায়, অন্তর্বর্তিকালীন জামিন পাওয়ার পরে অভিযুক্তের আচরণ নিয়ে সিবিআই-এর কোনও আপত্তি রয়েছে কি না। রাঘবচারিলু জানান, মদনবাবুর আচরণ নিয়ে সিবিআই-এর কোনও আপত্তি নেই। কুণালের ক্ষেত্রেও একই কথা জানিয়েছিল সিবিআই।
বিচারপতি নিশীথা মাত্রে বলেন, ‘‘এর আগে এই ডিভিশন বেঞ্চ অভিযুক্তের জামিন বাতিল করেছিল নিম্ন আদালতের তড়িঘড়ি রায় দেখে। সেই রায়ের বৈধতা নিয়ে এই আদালত প্রশ্ন তুলেছিল। এই আদালত এখন জানতে চাইছে, গত অগস্ট মাসের পরে তদন্তের কী ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। নির্দিষ্ট করে জানান।’’
রাঘবচারিলু জানান, গত অগস্ট মাসে নির্দিষ্ট সূত্রের ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসার দু’জনের বয়ান নথিভূক্ত করেছেন। সেই নথি আদালতে পেশও করেন সিবিআই-এর আইনজীবী। তা দেখে বিচারপতি তাপস মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘‘নির্দিষ্ট সূত্রের অর্থ কী? গোপনে কেউ তদন্তকারীকে জানিয়েছে?’’ সিবিআই-এর আইনজীবী জানান, হ্যাঁ। তা শুনে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘মনে রাখবেন, আজ কিন্তু জামিনের আবেদনের শুনানি হচ্ছে না। জামিন বাতিলের আবেদনের শুনানি হচ্ছে। সেই কথা মনে রেখে, নথি পেশ করুন।’’
সিবিআই-এর আইনজীবীর সওয়াল শেষ হলে মদনবাবুর আইনজীবী সুরেন্দ্রকুমার কাপুর বলতে ওঠেন। তিনি জানান, সিবিআই-এর অভিযোগ, সারদা-র অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে মদন মিত্র দু’টি ভাষণ দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, সেই ভাষণ ২০০৯ সালের। সেই সময় মদন মিত্র মন্ত্রী ছিলেন না। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তিনি সারদা-র কোনও অনুষ্ঠানে যাননি।
সুরেন্দ্র জানান, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালত মদনবাবুর জামিন খারিজ করে। তার পরে সিবিআই আরও কয়েকটি অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে। তাতে তাঁর মক্কেলের নাম নেই। তদন্তের সব নথি রয়েছে সিবিআই-এর কাছে। সুতরাং তাঁর মক্কেলের পক্ষে সেই নথি বিকৃত করাও সম্ভব নয়।