শুনানির সময় নিম্ন আদালতে তিনি নিয়মিত হাজির থাকছেন না। সে জন্য আমরি হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর রাধেশ্যাম অগ্রবালকে সোমবার ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি আমরি-কাণ্ডকে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার চেয়েও খারাপ ঘটনা হিসেবে অভিহিত করল হাইকোর্টের বিচারপতি গিরীশ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
আমরি-মামলায় রাধেশ্যাম অন্যতম অভিযুক্ত। ২০১১-র ৯ ডিসেম্বর ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুন লাগে। ভর্তি থাকা ৯২ জন রোগী মারা যান। জখমও হন বেশ ক’জন। লালবাজারের গোয়েন্দারা তদন্তে নামেন। অগ্নিকাণ্ড ও রোগী-মৃত্যুর ঘটনায় ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ রাধেশ্যাম-সহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়। রাধেশ্যামকে গ্রেফতারও করা হয়। হাইকোর্ট পরে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে। মামলাটি আপাতত চলছে আলিপুর আদালতে।
কিন্তু আলিপুরের শুনানিতে রাধেশ্যাম এক দিনও হাজির থাকছেন না এবং জামিনের শর্ত মানছেন না— এই অভিযোগ তুলে তাঁর জামিন খারিজের আবেদন করা হয় হাইকোর্টে, আমরি-কাণ্ডে মৃত ও আহতদের পরিজনের সংগঠনের তরফে। সংগঠনের কৌঁসুলি সচ্চিদানন্দ পাণ্ডে জানান, গত সপ্তাহে মামলাটি বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত ও বিচারপতি শিবসাধন সাধুর ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠেছিল। রাধেশ্যামকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দিয়ে বেঞ্চ সে দিন জানিয়ে দেয়, শুনানির সময় নিম্ন আদালতে হাজির না-হলে প্রয়োজনে পুলিশ রাধেশ্যামকে গ্রেফতারও করতে পারে।
রাধেশ্যামের জামিন খারিজের মামলাটির এ দিন ফের শুনানি ছিল হাইকোর্টে। রাধেশ্যাম হাজির ছিলেন। তাঁর কৌঁসুলি মিলন মুখোপাধ্যায় আদালতে একটি নথি দাখিল করে জানান, নিম্ন আদালতে তাঁর মক্কেলের গরহাজিরার কারণ সেখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা আছে।
নথিটি পড়ে বেঞ্চ অবশ্য সন্তুষ্ট হয়নি। বরং বিচারপতি গুপ্ত মিলনবাবুর উদ্দেশে বলেন, ‘’৯০ জনেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে মারা গেলেন, আর অভিযুক্ত নিজের স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন আদালতে অনুপস্থিত থাকছেন!’’ রাধেশ্যামের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘নথিতে কোথাও আপনি দুঃখ প্রকাশও করেননি! কোথাও লেখা নেই যে, আপনি দুঃখিত। অথচ আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।’’
এমতাবস্থায় রাধেশ্যামের জামিন খারিজ করাও হতে পারে বলে বেঞ্চ তাঁকে সতর্ক করে দেয়। পরে অবশ্য বিচারপতি গুপ্ত রাধেশ্যামের কৌঁসুলিকে নির্দেশ দেন, বেলা সাড়ে বারোটার মধ্যে রাধেশ্যামকে মুচলেকা দিয়ে বলতে হবে যে, নিম্ন আদালতের শুনানিতে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকবেন। বেলা সাড়ে বারোটায় কৌঁসুলি মারফত আদালতে মুচলেকা জমা দেন রাধেশ্যাম।
সেই মতো হাইকোর্টও এ দিন মামলাটি শেষ করে দিয়েছে।