বামেদের নবান্ন অভিযানে রণক্ষেত্র রাজপথ, লাঠি-ইটে জখম বহু

একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে অস্তিত্ব প্রমাণের তাগিদ ছিল বামেদের। নবান্ন অভিযানে সোমবার ভাল ভাবেই অস্তিত্ব জানান দিল তারা! পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধে উত্তপ্ত হল কলকাতা ও হাওড়ার রাজপথ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০৪:১১
Share:

লাঠিচার্জের মুখে বিমান-সূর্যকান্তেরাও।— নিজস্ব চিত্র।

একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে অস্তিত্ব প্রমাণের তাগিদ ছিল বামেদের। নবান্ন অভিযানে সোমবার ভাল ভাবেই অস্তিত্ব জানান দিল তারা! পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধে উত্তপ্ত হল কলকাতা ও হাওড়ার রাজপথ। পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হলেন একাধিক বাম নেতা-সহ বেশ কিছু মিছিলকারী এবং সাংবাদিক। আবার বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে জখম কিছু পুলিশকর্মী।

Advertisement

মোট ১৮ দফা দাবি নিয়ে নবান্ন অভিযানের জন্য কয়েক মাস ধরে রাজ্য জু়ড়ে প্রস্তুতি নিয়েছিল বামেরা। সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনে বিরোধী হিসাবে বিজেপি-র উত্থানের পরে নবান্ন অভিযানকে ঘিরেই রাস্তায় সাংগঠনিক শক্তি জানান দেওয়ার তাগিদ আরও বেড়েছিল আলিমুদ্দিনের। কলকাতা ও হাওড়ার ৫টি জায়গায় জমায়েত করে এ দিন মিছিল শুরু করার কথা ছিল বামেদের। কিন্তু তার আগেই বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের ২৪ জন বিধায়ক পুলিশি ঘেরাটোপ এড়িয়ে পৌঁছে যান নবান্নের উত্তর গেটে। তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেই খবর এসে পৌঁছনোর পরেই ৫টি জমায়েতের কেন্দ্রে পুলিশি বন্দোবস্ত আরও আঁটোসাঁটো করা হয়। মিছিলের গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ।

যে ভাবে পুলিশ এ দিন কাঁদানে ও রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করে মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করেছে, বেপরোয়া লাঠি চালিয়েছে, তা দেখিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি— বিজেপি-কে ঠেকাতে বামেদের অস্তিত্ব প্রমাণ ‘করিয়ে দেওয়া’র তাগিদ তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য প্রশাসনেরও ছিল। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্যও করেছেন, ‘‘সিপিএমকে অক্সিজেন দিচ্ছে পুলিশ। আর দিদি নিজে দিচ্ছেন কেষ্টকে!’’ প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন অভিযানের সময়ে ছিলেন বীরভূমে।

Advertisement

জনারণ্য কোনা এক্সপ্রেসওয়ে।— রণজিৎ নন্দী

তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, ভোটে কোণঠাসা হলেও বামেরা এখনও মুছে যায়নি। তারাই সংগঠিত ভাবে লোকজন এনে গোলমাল পাকিয়েছে। শাসক দলের এক শীর্ষ নেতার প্রশ্ন, ‘‘বামেদের অক্সিজেন দিয়ে সংখ্যালঘু ভোটকে খামোখা ভাগ করতে যাব কেন আমরা? এ সব তত্ত্ব অর্থহীন!’’ দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সিপিএমের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাই এখন ওদের নজর নবান্ন!’’ একই সুরে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সিপিএমের কোনও অস্তিত্ব নেই বলেই ওরা ইট-পাথর ছুড়ে, আগুন ধরিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী তা বরদাস্ত করা হবে না।’’

আরও পড়ুন:মারমুখী পুলিশ, বিস্মিত প্রাক্তনরা

প্রবল গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাঁরা মার খেলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য। প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, সুভাষ নস্কর, প্রবীণ নেতা মদন ঘোষ, নরেন চট্টোপাধ্যায় পুলিশের মারে আহত হয়েছেন। জখম আরও বহু বাম কর্মী-সমর্থক। পুলিশের লাঠি থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মাথা আড়াল করতে গিয়ে আহত হয়েছেন বাম সমর্থক ও সাংবাদিকেরা। গ্রেফতার হয়েছেন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। পিটিএস, হেস্টিংস, ফোরশোর রোড ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গোলমালের খবর পেয়ে মেয়ো রোডে অবস্থানে বসে পড়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমানবাবুরা। সূর্যবাবুর পাঞ্জাবিতে তখন রক্তের দাগ। সেখানেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘সরকার যতই মামলা দিক, হামলা করুক, ল়ড়াই চলবে।’’ বাম সমর্থক ও সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালন করবে বামফ্রন্ট। কলকাতায় ধর্মতলা থেকে এন্টালি বাজার পর্যন্ত মিছিল হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন