টাকা চেয়ে কলেজে তাণ্ডব টিএমসিপি-র

কেন নবীনবরণের টাকা তাদের হাতে তুলে দেবে না কলেজ কর্তৃপক্ষ, সেই অভিযোগ তুলে কলেজে ভাঙচুর চালাল টিএমসিপি-র ছাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের এই ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৪৫
Share:

কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে ভাঙচুরের পরে। — নিজস্ব চিত্র

কেন নবীনবরণের টাকা তাদের হাতে তুলে দেবে না কলেজ কর্তৃপক্ষ, সেই অভিযোগ তুলে কলেজে ভাঙচুর চালাল টিএমসিপি-র ছাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের এই ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠন। অনেকেই দ্রুত বাড়ির পথে পা বাড়ায়। টিএমসিপি-র অবশ্য দাবি, সাধারণ ছাত্রীদের রোষেই ওই ভাঙচুর। ওই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি।

Advertisement

গত বছর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত নদিয়া-মুর্শিদাবাদের কোনও কলেজেই নির্বাচন হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই কোনও কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। একই হাল কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজেও। তবে কলেজের টিএমসিপি নেতৃত্বের দাবি, পুরনো কমিটিকেই মান্যতা দিয়ে নবীনবরণ উৎসবের পরিচালনা করতে দিতে হবে। সেই মতো ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ক্ষমতাসীন টিএমসিপি-র ছাত্রী প্রতিনিধিরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাথমিক ভাবে ৩৫ হাজার টাকা লিখিত আবেদন করে।

গত ২ ডিসেম্বরের ওই চিঠি পেয়ে টাকা দিতে সম্মত হয়েছিলেন অধ্যক্ষা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে টাকা দিলেন না কেন? মানবীদেবীর যুক্তি, ‘‘টাকা দেব বলেছিলাম। কিন্তু, সেটা কবে দেব বলিনি।’’

Advertisement

টিএমসিপি-র তরফে দাবি, সোমবার অধ্যক্ষা কথা দিয়েছিলেন মঙ্গলবার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু, এ দিন কলেজে এসে কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন অধ্যক্ষা ফোনে টাকা দিতে নিষেধ করেছেন। এরপরেই উত্তেজিত ছাত্রীরা কলেজের নোটিশ বোর্ড, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে।


মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় (কলেজের অধ্যক্ষ)

এর আগে নানা ঘটনায় অশান্তি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার অধিকাংশ ঘটনাতেই নাম জড়িয়েছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি এ দিনের কলেজ ভাঙচুরকে সেই ধারাবাহিকতার নতুন সংযোজন বলেই মনে করছে।

তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল, কলেজে ভাঙচুরের পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা তো দূর, ঘটনার কথাই মানতে চাননি উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষা। মঙ্গলবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ দিন কলেজে ছিলাম না। ভাঙচুরের কথা জানা নেই।’’ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি বলছে, টিএমসিপি করলে ছাড়় মেলে সেই আপ্তবাক্যকেই ফের মান্যতা পেল অধ্যক্ষার কথায়।

এ দিন কলেজে গিয়ে দেখা গেল, গেটের সামনেই পড়ে রয়েছে ভাঙা নোটিশ বোর্ড। এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে ভাঙা চেয়ার, টেবিল। চারদিকে ছড়িয়ে টুকরো কাঁচ। দূরে এক পাশে টিএমসিপি-র ছাত্রীরা জটলা করে দাঁড়িয়ে। এক শিক্ষিকা জানালেন, ‘‘ক্লাস নেওয়ার সময় গোলমালের খবর পেয়ে ছুটে নিচে নেমে দেখলাম অবাধে তাণ্ডব চালাচ্ছে ছাত্রীরা।’’ ভয়ে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাইনি, স্বীকারোক্তি তাঁর।

শিক্ষাঙ্গনে এমনটা করা কি উচিত হয়েছে? কথা বলে সমস্যা মেটানো যেত না? ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সহকারি সাধারণ সম্পাদিকা সাবিরা খাতুন ভাঙচুরের কথা মানতে চাননি। সাবিরার দাবি, ‘‘সোমবার অধ্যক্ষা নবীনবরণের টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। পরদিনই তিনি ফোনে টাকা দিতে নিষেধ করলেন কেন?’’ ‘‘শেষ দেখে ছাড়ব’’—হুঁশিয়ারি তাঁর।

যে বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি পঠনপাঠনের সম্পর্ক নেই, তার জন্যে এতটা কেন মরিয়া হয়ে উঠল ছাত্রীরা। কলেজ শিক্ষিকাদের একটা বড় অশের প্রশ্ন, ‘‘নবীনবরণই যদি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে সেটা তো কলেজ কর্তৃপক্ষ করতে পারে। তাতে ছাত্রীরাও যোগ দিতে পারে। তা না করে কেন টাকার জন্য মরিয়া হয়ে ভাঙচুর করা?’’ তাঁদের অনেকে অন্য উদ্দেশ্য খুঁজছেন। যদিও সে সব উড়িয়ে প্রাক্তন সহকারি সাধারণ সম্পাদিকা সাবিরার দাবি, ‘‘অন্য কিছু নয়, আমাদের অধিকার অধ্যক্ষ কেড়ে নিতে চাইছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি মাত্র।’’

এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি অবশ্য অধ্যক্ষার পাশে দাঁড়িয়েছেন। উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘অধ্যক্ষা টাকা না দিয়ে ঠিক করেছেন। কারণ এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। তা হলে তিনি কেন ছাত্রীদের টাকা দেবেন? সেটা দিতে বরং বেআইনি হত।’’

মন্ত্রীর পথেই কলেজ ভাঙচুরের নিন্দা করেছেন টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত। অয়নের প্রস্তাব, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের নিয়ে কমিটি গড়ে নবীনবরণ উৎসবের আয়োজন করুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন