SSC recruitment Case Verdict

পরীক্ষা নিচ্ছিলেন স্কুলে, হঠাৎ খবর এল, চাকরি নেই! কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন শিক্ষক, মাথায় হাত প্রধানশিক্ষকদেরও

২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে থাকা ২৬ হাজার জনের চাকরি বৃহস্পতিবার বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৪৯
Share:

বহু শিক্ষক বিপাকে। —ফাইল ছবি।

পরীক্ষা চলছিল স্কুলে। ‘গার্ড’ দিচ্ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক। হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠে। ফোন ধরতেই খবর পেলেন, আর চাকরি নেই! সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিল করে দিয়েছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মনোজ তাঁতি। সম্বিত ফিরতেই বছর পঁয়ত্রিশের শিক্ষক ফোন রেখে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে ছুটলেন প্রধানশিক্ষকের ঘরের দিকে। খানিক বাদে কাঁদতে কাঁদতে স্কুলও ছাড়লেন তিনি। শুধু মনোজই নন, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি বিধানসভা কেন্দ্রের জামতলা ভগবানচন্দ্র হাই স্কুলের আরও ১০ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে।

Advertisement

বিপাকে পড়েছেন ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক শান্তনু ঘোষালও। তাঁর বক্তব্য, চাকরিহারাদের অধিকাংশই অঙ্ক-বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের অনুপস্থিতিতে ওই বিষয়গুলি কী ভাবে ক্লাসে পড়ানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রধানশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘’১১ জন শিক্ষক কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে বেরিয়ে গেলেন। সায়েন্সের সাবজেক্টগুলো এ বার কী ভাবে স্কুলে পড়ানো হবে? তা ছাড়া স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। স্কুলে প্রায় তিন হাজার ছাত্রছাত্রী। আমি স্কুল চালাব কী করে?’’

এত শিক্ষকের একসঙ্গে চাকরি চলে গেলে স্কুল চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বহু প্রধানশিক্ষক। একই পরিস্থিতি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার অর্জুনপুর হাই স্কুলে। ওই স্কুলের ৬০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ৩৬ জন চাকরি হারিয়েছেন। প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘’৬০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ৩৬ জনই চলে গেল। এখন ২৪ জনের পক্ষে কী ভাবে স্কুলের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে পড়ানো সম্ভব?’’

Advertisement

স্কুলের পরীক্ষার ডিউটিতে এসে সুপ্রিম কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের খবর জানতে পেরেছেন মেদিনীপুর টাউন স্কুলের দুই শিক্ষক। এক জন বাংলার। অন্য জন অর্থনীতির। অর্থনীতির শিক্ষক বলেন, ‘‘এর আগে দুটো কলেজে পার্শ্বশিক্ষক ছিলাম। বাড়িতে স্ত্রী, মেয়ে, বাবা, মা রয়েছে। এ বার কী করব? কোথায় যাব?’’

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই জেলার অন্তত ৫০০ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, বহু স্কুলেই শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এত দিন যাঁরা পড়াচ্ছিলেন, তাঁদেরও যদি এ বার চাকরি চলে যায়, জেলার শিক্ষাব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পরীক্ষার প্রস্তুতি, প্রশাসনিক কাজকর্ম, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন, সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হবে। দ্রুত নিয়োগ না হলে খুব সমস্যা হবে।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বৃহস্পতিবার বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালের এসএসসি পেয়ে যাঁরা চাকরি করছিলেন, তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। নির্দেশ, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাঁরা চাইলে পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন।

ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে লেখা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। কিন্তু এই তিন মাসের সময়সীমা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদালতের রায়ের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, চাকরিহারা যে প্রার্থীরা আগে কোনও সরকারি দফতরে বা সরকার পোষিত দফতরে চাকরি করতেন, তিন মাসের মধ‍্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement