চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি। গাছ চাপা পড়ে অকুস্থলেই মারা গেলেন দু’জন। —নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া পুরপ্রশাসকের ভবনের সামনে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হল দু’জনের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকে শোরগোল এলাকায়। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার উদাসীনতার জন্য অকালে জীবনহানির ঘটনা ঘটল এবং সেটাও আবার পুরপ্রশাসকের দফতরের কাছে। পুরপ্রশাসকের ব্যাখ্যা, দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ঝড়বৃষ্টি কিছুই ছিল না। তা সত্ত্বেও গাছটি ভেঙে পড়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, হাওড়ার মুখ্য পুরপ্রশাসকের দফতরের সামনে একটি ইউক্যালিপটাস গাছ ছিল। বুধবার ভোরে সেটা আচমকাই ভেঙে পড়ে। গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। মৃতদের এক জনের নাম উমেশ মাহাতো। তিনি পুরসভার স্থায়ী কর্মী। মারা যান নুর মহম্মদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি হাওড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। দু’জনকে কিছু ক্ষণের মধ্যে উদ্ধার করা হলেও তাঁদের চিকিৎসার সময় মেলেনি। অকুস্থলেই দুই পুরকর্মী মারা যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকাল সকাল ঘটনাস্থলে যান হাওড়ার মুখ্য পুরপ্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী এবং অন্যান্য আধিকারিক। যায় হাওড়া থানার পুলিশ। শুরু হয় গোলমাল। এই দুর্ঘটনার জন্য পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেন বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, ‘‘পুরপ্রশাসকের দফতরের অফিসের সামনে ওই গাছটি অনেক দিন ধরেই হেলে ছিল। কিন্তু পুরসভার নজরই ছিল না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টি হলে একটা কথা ছিল। কিন্তু কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়াই গাছটি ভেঙে পড়ে। অকালে দু’জন মানুষ চলে গেলেন। এর দায় কার?’’ পাল্টা পুরপ্রশাসক সুজয় বলেন, ‘‘গাছটি পুরনো হলেও সজীব ছিল। এটা দুর্ঘটনা। মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হবে।’’
স্থানীয়দের আশঙ্কা, ব্যস্ত সময়ে এই দুর্ঘটনা হলে আরও অনেকে জখম হতেন। প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে পারত। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা ইতিমধ্যে গাছটি কেটে সরিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন।
শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, দুই মৃত্যুর ঘটনাটি কানে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর নির্দেশে হাওড়া পুরসভায় যান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘ভাগ্য খারাপের কারণে এই ঘটনা। ঝড়-বৃষ্টি কিছুই ছিল না। তা সত্ত্বেও গাছটি ভেঙে পড়েছে। এটা ‘ব্যাড লাক’ ছাড়া কিছু নয়। আমরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এক জনের ছেলেকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। যিনি অস্থায়ী কর্মী ছিলেন, তাঁর জায়গায় পরিবারের কাউকে নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়াও পুরসভার তরফ থেকে দুই মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা দুই পরিবারের পাশে আছি।’’