Hooghly BLO Cries

ভাতের থালা হাতে হাপুস নয়নে কান্না বিএলওর! কমিশনকে দুষে ‘কাজের চাপে অসুস্থ’ সুমিতার ক্ষোভ, তাঁদের কথা কেউ ভাবছেনই না

ক্রন্দনরত সুমিতা মুখোপাধ্যায় হুগলির পান্ডুয়া ব্লকের বাঁটিকা বৈচী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষিকা। বিএলও হিসাবে কাজ করছেন ওই পঞ্চায়েতেরই ৪১ নম্বর বুথে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৩০
Share:

খেতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিএলও সুমিতা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

খাবারের টেবিলে থালায় ভাত-তরকারি। চেয়ারে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন এক মধ্যবয়স্কা। পরিবারের সদস্যেরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মাথায় হাত বুলোচ্ছেন। কিন্তু কান্নার বাঁধ ভেঙেছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলে চলেছেন, ‘‘আমি আর পারছি না।’’

Advertisement

ক্রন্দনরত ওই মহিলা একজন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)। নাম সুমিতা মুখোপাধ্যায়। হুগলির পান্ডুয়া ব্লকের বাঁটিকা বৈচী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষিকা বিএলও হিসাবে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতেরই ৪১ নম্বর বুথে। কিন্তু ১৩০০ এসআইআর ফর্মের মধ্যে মাত্র ৩০০ ‘এন্ট্রি’ করায় স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে ‘লো পারফর্মার’ আখ্যা দিয়েছে। উল্টে বিএলওর দাবি, বিডিও অফিসে ডেকে তাঁকে দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি। বাড়ি ফিরেই বাড়ির সকলের সামনে হাউ হাউ করে কাঁদেন সুমিতা। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল সেই ভিডিয়ো।

সুমিতার পরিবার সূত্রে খবর, বিএলও হিসাবে তাঁর ধারাবাহিকতা খারাপ দেখে গত বৃহস্পতিবার বিডিও অফিসে থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। সেখানে অনেক ক্ষণ বসে বসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুমিতা দুষছেন নির্বাচন কমিশনকে। তাঁর অভিযোগ, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এসআইআরের কাজে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু সে কথা ঊর্ধ্বতনদের কেউ বুঝছেনই না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তার পরেও এসআইআরের কাজ করছি। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০০ জনের নাম অনলাইনে আপডেট করেছি। তার পরেও আমাকে ব্লক অফিসে ডেকে পাঠিয়ে ওখানে অনলাইন এন্ট্রির কথা বলা হয়। কিন্তু সেখানে তো সার্ভারের সমস্যা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টে অবধি সেখানে বসে ছিলাম। তার পরেও প্রযুক্তিগত কারণে কাজ করতে পারিনি। কাউকে বলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। তত ক্ষণ আমার খাওয়াও হয়নি। আমার শরীর খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল, নিজেকে শেষ করে দিই।’’ বিএলওর সংযোজন, ‘‘আমি যখন বাড়ি ফিরি, আমার সহযোগী বিএলও আমার সঙ্গে বাড়ি পর্যন্ত এসেছিলেন বলে কোনও অঘটন ঘটেনি। না হলে আমার যা খুশি হতে পারত। আমাকে প্রচণ্ড হেনস্থা করা হচ্ছে। আমি আর পারছি না।’’

Advertisement

এই পরিস্থিতির জন্য কমিশনকে একহাত নেন সুমিতা। তাঁর দাবি, কমিশনের সঠিক পরিকল্পনা নেই। বার বার সিদ্ধান্ত বদল করছে। সমস্যাটা কোথায়? সুমিতা বলেন, ‘‘বিএলও-রা গোটা ‘ফিল্ড ওয়ার্ক’ করছেন। তাঁদের সমস্যাটা কেউ বুঝছেনই না। এটা শুধু আমার একার ঘটনা নয়, অনেকের সঙ্গে এই সমস্যা হচ্ছে।’’ তিনি উদাহরণ টানেন কাজের চেপে বিএলওদের ‘আত্মহত্যা’, অসুস্থ হওয়া এবং আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার দিকে। স্কুলশিক্ষিকা আরও বলেন, ‘‘আমরা সমাজে একটা সম্মান পাই। তার পরে যখন আমরা বিডিও অফিস থেকে এমন ব্যবহার পাই, তাতে অপমানিত হই। আমার শরীর খারাপ সত্ত্বেও আমাকে ছাড়া হচ্ছে না।’’

সুমিতার স্বামী বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। কোনও রকমে খাবার আর ওষুধ খাইয়ে সুস্থ করেছি।’’ অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘‘পোর্টালের সার্ভার ডাউন থাকার কারণে সমস্যা। তার দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমার স্ত্রীর উপর। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে মারাও গিয়েছেন। অসুস্থ হয়েছেন। আমার স্ত্রী বা অন্যান্য বিএলও তো কাজ করব না, বলছেন না। টার্গেট পূরণ করেও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন অনেকে।’’

শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং বিএলও ডিউটি প্রতিরোধ মঞ্চের আহ্বায়ক অনিমেষ হালদার নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সুমিতার কান্নার ভিডিয়ো শেয়ার করেন। অন্য দিকে, নির্বাচন কমিশনের তরফে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উনি ‘লো পারফর্মিং’ বিএলও। গড়ের চেয়ে অনেক কম ফর্মপূরণ করেছেন। যাঁদের গড় খারাপ এবং অনেককে অ্যাপ বোঝানোর জন্য ব্লক অফিসে ডাকা হয়েছিল। উনি ব্লক অফিসে এসেছিলেন এবং সেখানে কাজও করেছেন। তার পর তাঁর স্বামী ফোন করে জানিয়েছিলেন। শারীরিক অসুবিধার জন্য তাঁর কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। ব্লক অফিসে তাঁকে ‘হ্যান্ড হোল্ডিং হেল্প’ করে দেওয়া হয়েছে। ‌যদি তার চিকিৎসার বিষয় কিছু থাকে, সেটাও দেখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement