Freedom Fighter

Freedom Fighter: দেওয়ালে ফাটল ধরছে অগ্নিযুগের ‘সাগর কুটিরে’

২০০৯ সালে তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে ‘সাগর কুটির’কে সংরক্ষণ করে সংগ্রহশালা জাতীয় কিছু করার আবেদন জানিয়েছিলেন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৯:৩০
Share:

চত্বর সাজানো, িকন্তু ক্ষয় ধরেছে সাগর কুটিরে। খসে পড়ছে পলেস্তারা (ইনেসেটে)। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবীদের অন্যতম গোপন ঘাঁটি ছিল এ বাড়ি। এখান থেকে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গ্রামের মহিলা বা শিশুদের হাত দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যেত বিপ্লবীদের গোপন চিঠি। এ বাড়ি রক্ষার জন্য একসময়ে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ে রক্ত ঝরিয়েছেন গ্রামের মহিলা-পুরুষরা। অথচ, আরামবাগের বড়ডোঙ্গল গ্রামের সেই ‘সাগর কুটির’ আজ অনেকটাই অবহেলিত।

Advertisement

বহু ঘটনার সাক্ষী বাড়িটির বাইরের চত্বরে একটি শিশু উদ্যান, পানীয় জল এবং বসার ব্যবস্থা করেছে পঞ্চায়েত সমিতি এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত। কিন্তু মূল ভবনটির বহু দেওয়ালেই ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে প্লাস্টার। মনীষীদের শ’তিনেক দুর্লভ ছবি কবেই চুরি হয়ে গিয়েছে।

মহকুমার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কেউ আজ জীবিত নেই। কয়েক বছর আগে প্রয়াত হন পোল গ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামী সুকুমার সামন্ত। ২০০৯ সালে তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে ‘সাগর কুটির’কে সংরক্ষণ করে সংগ্রহশালা জাতীয় কিছু করার আবেদন জানিয়েছিলেন। একই আবেদন রয়েছে মহকুমার বিদ্বজ্জনদেরও। মহকুমার ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন দেবাশিস শেঠ। তিনি বলেন, “আমরা চাই, সাগর কুটিরকে সরকার অধিগ্রহণ করে ‘জাতীয় হেরিটেজ’ হিসাবে সংরক্ষণ করুক। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ওখানে একটা মিউজিয়াম বা গবেষণা কেন্দ্র করা হোহক। এই দাবিতে আমি ২০১১ সালে অনশনও করেছিলাম। প্রশাসনের স্থানীয় স্তরে কিছু কাজ হলেও সেটা যথেষ্ট নয়।”

Advertisement

দ্বারকেশ্বর নদের তীরে বড়ডোঙ্গল গ্রামের য়ে জায়গায় ‘সাগর কুটির’-এর অবস্থান, সেটি আগে ছিল ঘন বেনাবনে ঢাকা। জায়গাটি ছিল দুর্ভেদ্য। ১৯২১ সালে বন্যাত্রাণের কাজে এসে জায়গাটি বাছেন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। যিনি পরে রা্জ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। অনুকূল চক্রবর্তী নামে এক গ্রামবাসী তাঁর ওই পতিত জায়গাটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আস্তানা বানাতে ছেড়ে দেন। ব্রিটিশ পুলিশের অভিযান হলে যাতে দ্রুত পালানো যায়, তাই পাকা দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর বানানো হয় তিন দিকে তিনটি দরজা রেখে।

ইতিহাস বলছে, সেই নিভৃত কুটিরেই ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তুতিতে হুগলি জেলা সম্মেলন হয়। জেলার আইন অমান্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয় ওই কুটির। সেই সম্মেলনেই জেলার প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সাগরলাল হাজরার স্মৃতিতে কুটিরের নামকরণ হয় ‘সাগর কুটির’।

১৯৩১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সরকার আরামবাগের আইন অমান্য কমিটিকে বেআইনি ঘোষণা করে। পরের দিন ‘সাগর কুটির’ দখল করে ব্রিটিশ পুলিশ। কুটির ফেরাতে এলাকায় শুরু হয় আন্দোলন। মৃগেনবালা রায় নামে এক গ্রামবাসী মহিলাদের সংগঠিত করে কুটির দখল করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হন। নানা সময়ে ওই কুটিরে এসে থেকেছেন প্রফুল্ল ঘোষ, বিজয় মোদক, হেমন্ত বসু, অতুল্য ঘোষ, প্রাণকৃষ্ণ মিত্র, ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের মতো বিপ্লবীরা।

সাগর কুটির-সহ সংশ্লিষ্ট জায়গাটি প্রফুল্লচন্দ্র সেন তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে স্থানীয় বড়ডোঙ্গল রমানাথ ইনস্টিটিউশনকে দান করেন। এখনও সেটি স্কুলের অধীনে থাকলেও স্থানীয় সালেপুর-২ পঞ্চায়েত এবং ‘সাগর কুটির কল্যাণ সমিতি’ তদারক করে।

কিন্তু তদারকি যে যথাযথ হয় না, তা স্বীকার করেছেন সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী। তিনি এ জন্য মূলত অর্থাভাবকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “কুটিরের বাইরের চত্বরে কিছু কাজ হলেও মূল ঘরটারই সংস্কার করা হয়নি। উন্নয়ন খাতে রাজ্য সরকার দফায় দফায় ৫ লক্ষ টাকা দিচ্ছে। শেষ কিস্তির ১ লক্ষ টাকা এখনও পাইনি। চার লক্ষ টাকায় একটা মঞ্চ করা হচ্ছে। কিছু দেওয়াল প্লাস্টার হয়েছে।” পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা মানছেন সমিতির সভাপতি কমল কুশারীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন