Pradhan Mantri Aawas Yojna

আবাস তালিকায় নেই তিনি, অবাক আশাকর্মী

আবাস প্রকল্পের তালিকা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে বিরোধীদের। তাঁদের অভিযোগ, গরিব মানুষকে বঞ্চিত করে বহু ক্ষেত্রেই নিজেদের ‘পকেটের লোক’কে তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন শাসক দল তৃণমূলের নেতারা।

Advertisement

সুব্রত জানা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৩৪
Share:

দুঃস্থ: এমন বাড়িতেই বাস আশাকর্মী সাকিনা খাতুনের। নিজস্ব চিত্র।

টালি আর পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘর। বৃষ্টিতে জল পড়ে ঘরে। জানলা বাঁশের। সেখানে তালপাতা আর পলিথিন দেওয়া। রান্নাঘরেও পলিথিনের আচ্ছাদন। হাওড়ার শ্যামপুরের চাঁপাবাড় পশ্চিমপাড়ায় কার্যত অথর্ব স্বামী এবং সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে এই বাড়িতেই থাকেন সাকিনা খাতুন। পেশায় আশাকর্মী। আবাস প্লাস যোজনায় ঘর পাওয়ার প্রকৃত যোগ্য কারা, প্রশাসনের নির্দেশে সেই সমীক্ষা করছেন তিনি। সেই তালিকায় অবশ্য তাঁর নাম নেই। আশাকর্মীর বিস্ময়, ‘‘তা হলে, আমরা কি বড়লোক! সরকারি প্রকল্পে ঘর পাওয়ার যোগ্য নই!’’

Advertisement

এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘যে তালিকা নিয়ে সমীক্ষা হচ্ছে, সেটি ২০১৮ সালের তৈরি। দেখা গিয়েছে, অনেক গরিব মানুষের নাম তালিকায় নেই। আগামী দিনে তাঁদের কথা চিন্তাভাবনা করা হবে।’’ শামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলি মোল্লা বলছেন, ‘‘প্রত্যেক গরিব মানুষ ঘর পাবেন। এই তালিকায় যাঁদের নাম নেই, আগামী দিনে তাঁদের ঘর করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’’ পাকা বাড়ি থাকা অনেক লোকের নাম তালিকায় রয়েছে। সেখানে সাকিনার মতো গরিব মানুষের নাম কেন নেই, সেই প্রশ্ন অবশ্য উঠছে।

সাকিনা জানান, সমীক্ষার কাজ করতে গিয়ে আবাস প্রকল্পের তালিকা হাতে পেয়ে নিজের নাম তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন। না দেখে হতাশ হয়েছেন। সমীক্ষায় দেখছেন, পাকা ছাদের বাড়ি রয়েছে, এমন পরিবারও আবাস প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সমীক্ষায় কার নাম বাদ যাবে, কার যাবে না, জানি না। তবে, সমীক্ষা না হলে তো তালিকায় নাম থাকা সকলেই ঘর পেতেন। অথচ মাথা গোঁজার জায়গা সেই অর্থে না থাকলেও, আমাদের কথা বিবেচনাই করা হয়নি।’’

Advertisement

মঙ্গলবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চায়েতের বৈঠকে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন সাকিনা। স্বামী জাহিরউদ্দিন কয়াল ঘরের সামনে বসে। মেয়ে আদুড় গায়ে খেলে বেড়াচ্ছে। কেউ এলে ঘরে বসতে দেওয়ার জায়গাটুকু কার্যত নেই। সাকিনা জানান, স্বামী রংমিস্ত্রি। বছরখানেক আগে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তখন থেকেই তিনি বাড়িতে। কাজ করতে পারেন না। সাকিনা বলেন, ‘‘আশাকর্মীর কাজে মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা পাই। স্বামীর ওষুধ আর সংসার খরচেই সব শেষ। ঘর তৈরি করব কি করে? রাতে বৃষ্টি হলে, জেগে কাটাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকারি স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়। ঘরের জন্য বহু বার এলাকার নেতা, পঞ্চায়েতে জানিয়েছি। পাইনি।’’

আবাস প্রকল্পের তালিকা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে বিরোধীদের। তাঁদের অভিযোগ, গরিব মানুষকে বঞ্চিত করে বহু ক্ষেত্রেই নিজেদের ‘পকেটের লোক’কে তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন শাসক দল তৃণমূলের নেতারা। অনেক ক্ষেত্রে তা হয়েছে টাকার বিনিময়ে। ফলে, সাকিনার মতো অনেকেই সরকারি সাহায্য থেকে দূরেই থেকে গিয়েছেন। প্রকৃত গরিব মানুষকে এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে, এই দাবি তুলছেন তাঁরা। বিরোধীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন