Chinsurah

চুঁচুড়ায় পুর প্রতিনিধির ছেলেকে গঙ্গাপাড় ইজারা

পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী জানিয়েছেন, ১০ বছরের জন্য ওই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। বছরে ১৫ হাজার টাকা করে ইজারা বাবদ পুরসভাকে দিতে হবে।

Advertisement

সুদীপ দাস

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫১
Share:

দখল: চুঁচুড়ায় গঙ্গাপাড়ে চলছে নির্মাণের কাজ। ছবি: তাপস ঘোষ

ফের গঙ্গার পাড়ে হাত!

Advertisement

গঙ্গার পাড় দখল করে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে শ্রীরামপুর পুরসভার বিরুদ্ধে। এ বার চুঁচুড়ায় গঙ্গাপাড় ‘চুরি’র অভিযোগ উঠছে পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এখানকার প্রতাপপুরে গঙ্গার পাড় দুই যুবককে ইজারা দিয়েছেন হুগলি-চুঁচুড়া পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে একজন তৃণমূলের এক পুর প্রতিনিধির (কাউন্সিলর) ছেলে। শোনা যাচ্ছে, ওই জায়গায় রেস্তরাঁ হবে। জোরকদমে কাজ চলছে। এ নিয়ে হইচই বেঁধেছে। ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা। শাসক দলকে বিঁধছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোনও অনুমতি না নিয়ে নদীর পাড় চুরিকরা হচ্ছে।

Advertisement

পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী জানিয়েছেন, ১০ বছরের জন্য ওই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। বছরে ১৫ হাজার টাকা করে ইজারা বাবদ পুরসভাকে দিতে হবে। প্রতি বছর ১০% হারে ভাড়া বাড়বে বলে চুক্তি হয়েছে। জয়দেব বলেন, ‘‘পুরবোর্ডের সভায় ওই জায়গা ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইজারা পেয়েছেন শহরেরই দুই যুবক। ওঁরা রেস্তরাঁ করবেন। সেই কাজ চলছে।’’

ওই জায়গা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জানিয়ে পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, ‘‘কাজ হচ্ছে কি না, জানি না। পোর্ট ট্রাস্ট এবং সেচ দফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। সাড়া মিললে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, লোহার রডের কাঠামো বসেছে। গঙ্গার পাড়ে উপর-নীচে দু’টি ধাপ আছে। ওঠানামার জন্য বাঁশের সুসজ্জিত মাচা তৈরি হয়েছে। মিস্ত্রিরা কাজে ব্যস্ত। তাঁরা জানালেন, রেস্তরাঁ হচ্ছে। পুরসভার অনুমতি নিয়ে কাজ হচ্ছে। জায়গার আয়তন প্রায় ৬০ ফুট বাই ৪০ ফুট।

নদীর কতটা কাছে নির্মাণ করা যায়? কী বলছে আইন?

পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাই কোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নদীর পাড় বরাবর ৪৯ মিটার পর্যন্ত জমিতে সৌন্দর্যায়ন ছাড়া কোনও নির্মাণ নিষিদ্ধ। আর, গঙ্গার পাড়ে কিছু করার এক্তিয়ার পুরসভা বা পঞ্চায়েতের নেই।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, ওই জায়গায় সরকারি প্রকল্পে সৌন্দর্যায়ন, সাধারণ মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুর-পারিষদ জয়দেবের যুক্তি, ‘‘পার্কের ওই অংশে মানুষের যাতায়াত বিশেষ নেই। তাই, ইজারা দেওয়া হয়েছে।’’ বিধিনিষেধের প্রশ্নে তাঁর থেকে সদুত্তর মেলেনি। তবে, ইজারা পাওয়া দুই যুবকের মধ্যে এক জন যে তৃণমূলের পুর প্রতিনিধির ছেলে, জয়দেব মানছেন। যদিও, তাঁর নাম বলেননি।

ঘটনার খবর প্রশাসনের কানেও পৌঁছেছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘গঙ্গাপাড় ইজারা দেওয়ার এক্তিয়ার নেই পুরসভার। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

চুঁচুড়ার বাসিন্দা সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিয়োগ, বেআইনি কাজ করছে পুরসভা। সকলের প্রতিবাদ জানানো উচিত। এলাকার এক রাজ্য সরকারি কর্মীর প্রশ্ন, ‘‘এর পরে সাধারণ মানুষ গঙ্গাপাড় দখল করলে, পুরসভা কী বলবে?’’ বিজেপির রাজ্য নেতা তথা আইনজীবী স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘কার জমি, কে ইজারা দেয়! নানা দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে চেপে ধরায় ওদের টাকা কামানোর জায়গা কমেছে। তাই, গঙ্গাপাড় চুরি করছে। তৃণমূলের কাউন্সিলরের ছেলেকে করে খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন