ফাইল চিত্র।
পুর এলাকার নাগরিকদের স্বাস্থ্যের খবর নিতে এ বার থেকে একসঙ্গে বাড়ি বাড়ি যাবেন জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও হাওড়া পুরসভার চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই রিপোর্ট নিয়ে প্রতিদিন জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আলোচনার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার বা টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে পুর চিকিৎসকেরা রোগীকে পরামর্শ দেবেন।
বৃহস্পতিবার হাওড়া পুর ভবনে জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও সদ্য গঠিত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, হাওড়া পুরসভায় ৩৬০০ জন চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সমীক্ষা করতেন। ফলে পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডের ডেঙ্গি থেকে কোভিড পরিস্থিতি, সবেরই পরিসংখ্যান জেলা প্রশাসন এবং পুরসভার হাতে থাকত। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে এই কাজ বন্ধ ছিল। যে কারণে কোন এলাকায় সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে, সেই তথ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আসছিল না। সংশ্লিষ্ট দফতর বিষয়টি এ দিনের বৈঠকে তোলার পরেই সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী এবং পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা যৌথ ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সমীক্ষা চালাবেন।
পাশাপাশি, হাসপাতালে করোনায় মৃতের দেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে আত্মীয়দের থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গও এ দিনের বৈঠকে উঠেছে। যা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে সেখানেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত আড়াই বছর ধরে পুর ভোট না হওয়ায় প্রথম দিকে পুর কমিশনারকে প্রশাসক করে হাওড়া পুরসভা পরিচালনা করা হচ্ছিল। কাজে গতি আনার জন্য ২০১৯ সালে এক বার সাত সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলী গঠিত হয়। পরে তা-ও ভেঙে দেওয়া হয়। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসার পরে বুধবার সমবায়মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায়কে চেয়ারপার্সন করে ফের সাত সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে।
তাঁর নেতৃত্বেই জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তৃণমূলের বিধায়ক গৌতম চৌধুরী, মনোজ তিওয়ারি, রানা চট্টোপাধ্যায়, নন্দিতা চৌধুরী এবং হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য। জেলা প্রশাসনের তরফে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক দিব্যা লগানাথন, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা।
এ দিনের বৈঠকে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা, জঞ্জাল অপসারণ এবং বর্ষায় শহরের জমা জল বার করা নিয়েও আলোচনা হয়। হাওড়া ডুমুরজলা ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং সালকিয়ায় ‘আলো’ নামের একটি পুর ভবনকে সেফ হোম করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সেফ হোমগুলির দেখভাল করবে পুরসভা নিজেই। অরূপবাবু বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা যৌথ ভাবে পুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের সমীক্ষা করবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তাঁদের চিকিৎসা হবে।’’
এ দিকে বালিটিকুরি ইএসআই কোভিড হাসপাতালে নিত্যদিন চলা গোলমালকে ঘিরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে এক বছরের মাথায় বদলি করে দেওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার এবং কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, হাওড়ায় কোভিড সংক্রমণ যখন তুঙ্গে, সম্পূর্ণ পরিকাঠামোহীন ওই হাসপাতালের মূল সমস্যাগুলিকে আড়াল করতেই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সরানো হল। এর ফলে এই জেলায় এত দিন ধরে চলতে থাকা কোভিড-লড়াই জোর ধাক্কা খাবে বলেই মত তাঁদের।
যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, এটি রুটিন বদলি। বালিটিকুরি ইএসআই-এ চলা গোলমালের জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বদলি করা হয়নি। অরূপবাবু জানান, বালিটিকুরি হাসপাতালের সমস্যা মেটানোর জন্য স্থানীয় বিধায়ককে ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। এর পর থেকে তিনিই ব্যবস্থা নেবেন।