হাওড়া আদালত চত্বরে অভিযুক্ত সুকান্ত সাহু। —নিজস্ব চিত্র।
খুনের অভিযোগে আরপিএফের এক জওয়ানকে যাবজ্জীবন সাজা শোনাল হাওড়া আদালত। শুক্রবার হাওড়া আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সোমেশপ্রসাদ সিন্হা এই রায় দেন।
ঘটনাটি ২০২০ সালের জুন মাস। করোনার কারণে তখন গোটা দেশ প্রায় গৃহবন্দি। সেই সময়ই খুন হয়ে যান হাওড়ার শিবপুর এলাকার বাসিন্দা গুণনিধি সাহু। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, তিনি তাঁর সুকান্ত সাহু নামে এক যুবকের সঙ্গে বাইকে চেপে বাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন। আর ফেরেননি। তিন দিন পর শালিমার স্টেশন সংলগ্ন একটি ড্রেন থেকে ওই বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয়।
খুনের মামলা রুজু করে শিবপুর থানার পুলিশ। এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। সেখানেই গুণনিধিকে দেখা যায় সুকান্তের বাইকের পিছনে। পুলিশ জানতে পারে সুকান্ত ওই বৃদ্ধের আত্মীয় এবং আরপিএফের এক জওয়ান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরেই সুকান্তকে আটক করে পুলিশ। জেরার মুখে গুণনিধিকে খুনের কথা স্বীকার করে নেন তিনি। তার পরেই খুন এবং খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সুকান্তকে।
জানা গিয়েছে, গুণনিধির পূর্বপরিচিত সুকান্ত। শিবপুর এলাকায় একাই থাকতেন গুণনিধি। ২০২০ সালের ৩ জুন সন্ধ্যায় তিনি প্রতিবেশীদের জানান, তিনি সুকান্তের সঙ্গে শালিমারে তাঁর বাড়ি যাচ্ছেন। রাতে ফিরে আসবেন। গুণনিধিকে যিনি খাবার দেন, পরের দিন সকালে এসে তিনি দেখেন ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। এমনকি, রাতের খবরও পড়ে রয়েছে। সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশীরা সুকান্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, রাতেই শালিমারের কাছে কালী মন্দিরের পাশে ছেড়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু দু’দিন কাটলেও গুণনিধি বাড়ি না ফেরায় প্রতিবেশীরা তাঁর পুত্রের সঙ্গে যোগোযোগ করেন। তিনি এসে সুকান্তের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই সন্দেহ হওয়ায় থানায় জানানো হয়। নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়। তদন্তে নেমে সুকান্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা যায়, গুণনিধির থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিলেন সুকান্ত। সেই টাকা ফেরতের জন্য বার বার বলছিলেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু সুকান্তের কাছে টাকা ছিল না ফেরত দেওয়ার মতো। টাকা না দেওয়ার জন্যই গুণনিধিকে খুনের পরিকল্পনা করেন সুকান্ত। বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধকে নিয়ে গিয়ে নির্জন এলাকায় খুন করে শালিমার স্টেশন সংলগ্ন ড্রেনে দেহ ফেলে দিয়ে এসেছিলেন। পুলিশকে তিনি জানান, করোনাকালে খুনের তদন্ত সে ভাবে হবে না বলেই ভেবেছিলেন। সরকারি আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় জানান, নির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই সুকান্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। শুক্রবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ে খুশি মৃত বৃদ্ধের পরিবার।