Coromandel Express Accident

কারও পরিজন করমণ্ডলের যাত্রী, কেউ ট্রেন বাতিলে বিক্ষুব্ধ, চাপে হিমশিম খাচ্ছে হাওড়া ও শালিমার

কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই খবর আগে থেকে না জানার কারণে যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছচ্ছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

হাওড়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ২৩:৩৪
Share:

হাওড়া স্টেশন জুড়ে উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। ছবি— পিটিআই।

ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। রেল সূত্রে খবর, শুধু করমণ্ডলই নয় আরও একটি দূরপাল্লার ট্রেন (হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস) লাইনচ্যুত হয়েছে। হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ। কত জনের মৃত্যু হয়েছে, কত জনই বা আহত, তা শুক্রবার রাত পর্যন্ত এখনও স্পষ্ট নয়। জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে উদ্ধারকাজ। এরই মধ্যে হাওড়া স্টেশনে আনাগোনা বাড়ছে উদ্বিগ্ন পরিজনদের। কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও বা স্ত্রী ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে লাফিয়ে।

Advertisement

শুধু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনগুলির যাত্রীদের পরিজনেরাই নন, হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণ ভারতের ট্রেন ধরতে এসেছেন বহু মানুষ। কিন্তু দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছে প্রায় সমস্ত ট্রেনই। কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই খবর আগে থেকে না জানার কারণে যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছচ্ছেন। সকলেরই গন্তব্য স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সের হেল্প ডেস্ক।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাসিন্দা জ্যোৎস্না বেগম কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা এসেছেন তামিলনাড়ুর ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে। চেন্নাই মেলে টিকিট ছিল মা, ছেলের। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে বাতিল হয়েছে ট্রেন। ফলে আতান্তরে পড়েছেন তাঁরা। জ্যোৎস্না বলেন, ‘‘চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ইন্ডিয়াতে চেনাশোনা কেউ নেই। এখন শুনছি ভেলোর যাওয়ার ট্রেন বাতিল হয়েছে। আমি নিজে অসুস্থ, হাতে টাকাপয়সাও খুব বেশি নেই। খুবই বিপদে পড়ে গেলাম। কী করব বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

ভিড়ে ভিড়াক্কার হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সে দেখা অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে পুরী বেড়াতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়েছে তাঁর ট্রেন পুরী এক্সপ্রেসও। অগত্যা বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। অনন্যা বলছেন, ‘‘এ যাত্রায় আর মহাপ্রভুর দর্শন হল না। খুবই মনখারাপ। ফিরে যাচ্ছি।’’

হাওড়া স্টেশনের পাশাপাশি শালিমার স্টেশনেও খোলা হয়েছে রেলের হেল্প ডেস্ক। সেখানেও বহু উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। সকলেই তথ্য জানতে চান সকলের আগে। ফলে সামান্য ধাক্কাধাক্কির পরিস্থিতিও তৈরি হয়। স্টেশনে উপস্থিত একদল যাত্রী আবার ট্রেন বাতিলের খবর শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। তাঁদের সকলেরই দক্ষিণ ভারতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সময় স্টেশনে উপস্থিত অনেকের কাছেই যা অসংবেদনশীল ঠেকেছে। যদিও হাওড়া স্টেশন এবং শালিমার— দু’জায়গাতেই কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল নিরাপত্তাবাহিনী।

হাওড়া এবং শালিমারে ভিড় রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ প্রতি দিন হাওড়া থেকে ট্রেনে করে দক্ষিণে যান কাজের সন্ধানে। কিন্তু একের পর এক ট্রেন বাতিল হওয়ায় বড় সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলি। পকেটে সামান্য টাকা। ট্রেন বাতিল হওয়ায় প্রত্যেককেই রাত কাটাতে হবে স্টেশন চত্বরে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এখন তারই অপেক্ষা হাওড়া স্টেশন জুড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন