Corona

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, লালারস পরীক্ষায় জোর

এখন জেলায় প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৭:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

সংখ্যাটা বাড়ছেই। হুগলিতে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আশঙ্কিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজনীয়তা যে শেষ হয়নি, বারে বারেই তাঁরা বলেছেন। কিন্তু জনগণের বিপুল অংশে সেই সচেতনতা উধাও। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিধানসভা ভোটের প্রচার।

Advertisement

এই অবস্থায় ভোটের পরে সংক্রমণ উদ্বেগজনক ভাবে বাড়তে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। হালচাল দেখে স্বাস্থ্য দফতর করোনা মোকাবিলায় নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, সংক্রমণ কমে যাওয়ায় দৈনিক করোনা পরীক্ষা ১০০-১৫০ জনে নেমে এসেছিল। সেই সংখ্যা বুধবার থেকে বাড়ানো হয়েছে। ওই দিন প্রায় ৬০০ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। জেলার প্রধান পাঁচটি হাসপাতাল (চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর, আরামবাগ, শ্রীরামপুর, চন্দননগর মহকুমা ও উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল) এবং ১৮টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফিভার ক্লিনিক খোলা হয়েছে। সেখানে জ্বরের রোগীদের মধ্যে সন্দেহ হলে করোনা পরীক্ষা করা হবে।

অক্টোবর মাসে হুগলিতে অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। নভেম্বরেও বহু মানুষ সংক্রমিত হন। ডিসেম্বরের শেষ থেকে সংক্রমণ কমতে থাকে। চলতি মাসের শুরুতে অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬-তে নেমে গিয়েছিল। দৈনিক সংক্রমণ ১০ জনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। ২ মার্চ সংক্রমিত হন মাত্র এক জন। ৮ মার্চের পর থেকে সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে। বুধবারের সরকারি বুলেটিনে দেখা যাচ্ছে দৈনিক সংক্রমিত ২৮ জন। সোমবার সংক্রমিত হয়েছিলেন ২১ জন। তার আগের দিন ১৭ জন। এখন অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ১২২ জন। সংক্রমণ বৃদ্ধির হার এতেই পরিষ্কার।

Advertisement

আনলক-পর্বে জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার সময় চিকিৎসকেরা বারবারই মাস্ক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত ধোয়ার বিধি চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। কিন্তু সমাজের একটা বড় অংশ তা মানেনি। সঙ্কট বাড়িয়েছে বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি। জনগণকে ভাল রাখার বার্তা দিতে যাঁরা গলা ফাটাচ্ছেন, সেই রাজনৈতিক প্রার্থী থেকে কর্মী— করোনা নিয়ে কারও হেলদোল চোখে পড়ছে না বললেই চলে। জনসভা বা মিছিলে প্রচুর মানুষ শামিল হচ্ছেন মাস্ক না পরেই।

অথচ, করোনা রুখতে প্রচার-পর্বে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তা খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে। প্রার্থীদের অনেকের সাফাই, মাস্ক পরে হাঁটতে বা কথা বলতে অসুবিধা হয়। রাজনৈতিক কর্মীরাও করোনা-ভীতি উড়িয়ে অকুতোভয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, গত বছরে লকডাউনের দুর্বিষহ পরিস্থিতি সবাই ভুলে গেলেন?

সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শ্রমজীবী, সিঙ্গুর ট্রমা কেয়ার সেন্টারে কোভিড চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো বাড়ানো হবে। দৈনিক আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণ করে কোথায় সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে তা চিহ্নিত করা হবে। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগের মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোটা জেলা থেকেই সংক্রমণের খবর এলেও চন্দননগর এবং শ্রীরামপুর মহকুমায় তা বেশি বলে জানা গিয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন জেলায় প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক
বলেন, ‘‘ভোট-প্রচারে যে ভাবে কোভিড-বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা অশনি সঙ্কেত। মহারাষ্ট্র-সহ কয়েকটি রাজ্যে করোনার বাড়াবাড়ির কথা জানা সত্বেও মানুষ কেন এত অবুঝ হচ্ছেন, বোঝা দায়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement