Children Malnutrition

হুগলিতে চরম অপুষ্ট শিশু প্রায় ৬০০, পুষ্টি-কেন্দ্র মাত্র ২

জাঙ্গিপাড়ার মমতা নায়েক তাঁর ১১ মাসের মেয়েকে কামারপুকুরের পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। যাতায়াতে পেরোতে হয় মোট ১১২ কিলোমিটার রাস্তা।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:২৮
Share:

পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র

করোনা-পর্বে প্রায় দু’বছর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ ছিল। তার জেরে হুগলিতে অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে চরম অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬০০। কিন্তু তাদের চিকিৎসার জন্য জেলায় ১০টি করে শয্যার ‘পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র’ মাত্র দু’টি। পান্ডুয়া এবং গোঘাটের কামারপুকুরে। এই অবস্থায় জেলায় আরও পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি এবং চালু কেন্দ্রগুলিতে শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলছে অপুষ্ট শিশুর পরিবারগুলি।

Advertisement

পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালায় স্বাস্থ্য দফতর। এখানে চরম অপুষ্ট শিশুদের রেখে চিকিৎসা করানো হয়। পুষ্টিকর খবারও দেওয়া হয়। জাঙ্গিপাড়ার মমতা নায়েক তাঁর ১১ মাসের মেয়েকে কামারপুকুরের পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। যাতায়াতে পেরোতে হয় মোট ১১২ কিলোমিটার রাস্তা। ক’দিন আগেই ওই কেন্দ্রে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে গুরুতর অপুষ্ট ছিল। কেন্দ্রে বেশ কিছুদিন মেয়েকে রাখার পরে এখন ওজন স্বাভাবিক হয়েছে। সদ্য বাড়ি ফিরে গেলেও এ বার ওজন যাতে ঠিকঠাক থাকে, সে জন্য বাড়ি থেকে এত দূর আমাকে নিয়ম করে মেয়েকে আনতে হয়। এ রকম কেন্দ্র কাছাকাছি থাকলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হত না।”

শয্যা বেশি থাকলে আরও অনেক শিশু যথাযথ চিকিৎসা এবং পুষ্টিকর খাবার পেত বলেও মনে করেন মমতা। একই মত গোঘাট সংলগ্ন বাঁকুড়ার বৈতলের সাইমা বিবি, তারকেশ্বরের মিনা মালিকের মতো মায়েদের। যাঁদের সন্তানেরা অপুষ্ট।

Advertisement

পান্ডুয়ার কেন্দ্রটির নিজস্ব ভবন থাকলেও কামারপুকুর কেন্দ্রটি সেখানকার গ্রামীণ হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের এটা অংশে চলে। সম্প্রতি আরামবাগের মহকুমাশাসক সুভাষিণী ই কামারপুকুর কেন্দ্রটির পরিষেবা খতিয়ে দেখতে এসে সেখানে আরও বেশি শয্যার পক্ষেই সায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের পরিষেবা সন্তোষজনক। তাই পরিকাঠামোর আরও উন্নয়নের চাহিদাও আছে। যেমন আরও শয্যা, শিশুদের খেলার মাঠ এবং নিজস্ব ভবন।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া জানান, রাজ্য স্তরে এখনই জেলায় পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র বা শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়নি। তবে, কামারপুকুর কেন্দ্রটি স্থানান্তর করতে একই চত্বরে থাকা পুরনো হাসপাতাল ভবনটি সংস্কারের পরিকল্পনা হচ্ছে।

করোনা পর্বের পর, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি ফের চালু হয়। কিন্তু সেখানে শিশুদের সকালের খাবারে কলা দেওয়া এখনও চালু হয়নি। খোলার পরে দু’মাস প্রতিদিন গোটা ডিম বরাদ্দ ছিল। তার পর থেকে বর্তমানে তিন দিন গোটা, তিন দিন অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে। খিচুড়িতে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সয়াবিন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বরাদ্দ অনুপাতে আনাজও কমাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তারই জেরে যথাযথ পুষ্টি সরবরাহের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি থেকে চরম অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত করা হয়। তাতেই সংখ্যাটা মিলিত ভাবে প্রায় ছ’শো বলে দুই দফতরের হিসাব। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, দুই পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তাদের মাপকাঠি (ওজন ও উচ্চতা) অনুযায়ী চিহ্নিত করা চরম অপুষ্ট শিশুর মধ্যে কামারপুকুরে রয়েছে ১৩০টি, জাঙ্গিপাড়ায় ২০০। সমাজকল্যাণ দফতরের হিসেবে, তারা তাদের মাপকাঠি (বয়স ও ওজন) অনুযায়ী ২৬১ জন চরম অপুষ্ট শিশুকে চিহ্নিত করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন