Brick Klin

Production: ভাটায় শ্রমিক কমছে, মার খাচ্ছে উৎপাদন

পান্ডুয়ার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেল, কোথাও শ্রমিকেরা গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ ছাউনির তলায় আশ্রয় নিয়েছেন।

Advertisement

সুশান্ত সরকার 

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪৮
Share:

পান্ডুয়ার একটি ভাটায় শ্রমিকরা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র।

একে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। তাতে ইট তৈরিতে কমেছে লাভের অঙ্ক, এমনটাই দাবি ভাটা-মালিকদের। তার উপরে প্রচণ্ড গরমে শ্রমিক সঙ্কট শুরু হয়েছে হুগলির বিভিন্ন ইটভাটায়। ফলে, মার খাচ্ছে উৎপাদন।

Advertisement

বিভিন্ন ইটভাটায় খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, একটু বেলা বাড়লেই যে হারে রোদের তেজ বাড়ছে, তাতে শ্রমিকদের পক্ষে টানা কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, খোলা আকাশের নীচে তাঁদের কাজ করতে হয়। কোথাও কোথাও সকাল ছ’টা থেকে ঘণ্টাদেড়েক কাজ হচ্ছে। তার পরে রোদ কমে গেলে বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত। বিহার, ঝাডখণ্ডের মতো রাজ্য থেকে থেকে বহু মানুষ হুগলিতে ইটভাটায় কাজ করতে আসেন। গরমের জন্য তাঁদের অনেকে ফিরে গিয়েছেন।

পান্ডুয়ার একটি ইটভাটার মালিক শেখ আখতার আলি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জেরে এমনিতেই দু’বছর ব্যবসা মার খেয়েছে। এখন বাজার ভাল হলেও নানা সমস্যায় পড়েছি। প্রখর রোদ আর গরমের হলকায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। গরমের জন্য বেশ কয়েকজন শ্রমিক বাড়ি চলে গিয়েছেন। ফলে, উৎপাদনে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। খদ্দের থাকলেও ইট জোগান দিতে পারছি না। মহাসঙ্কটে পড়েছি।’’

Advertisement

পান্ডুয়ার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেল, কোথাও শ্রমিকেরা গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ ছাউনির তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। বসন্ত পাসোয়ান পান্ডুয়ার একটি ইটভাটার শ্রমিক। তাঁর বাড়ি বিহারে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গায়েগতরে খাটতে হয়। একটু বেলা বাড়লেই ঠা ঠা রোদে কাজ করার উপায় থাকছে না। সাতসকালে আর বিকেলে যেটুকু কাজ করা যাচ্ছে।’’

জেলা ইটভাটা মালিকদের সংগঠন ‘ব্রিকফিল্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তাপস দাশগুপ্ত জানান, জেলায় আগে সাড়ে তিনশোর বেশি ইটভাটা ছিল। লোকসানের কারণে গত কয়েক বছরে একশোরও বেশি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পান্ডুয়া ব্লকে আগে ২২টি ইটভাটা ছিল। তার মধ্যে তিনটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন জেলায় সওয়া দু’শো ইটভাটা চালু রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটায় গড়ে দেড়শো-দু’শো শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে জেলায় ৪৫-৫০ হাজার শ্রমিক এই কাজে যুক্ত।

বন্ধ কাজ। সিঙ্গুরের একটি ইটভাটায় ঘুম শ্রমিকদের। ছবি: দীপঙ্কর দে

ইট তৈরি করতে মাটি, সাদা বালি এবং কয়লা প্রয়োজন হয়। ভাটা-মালিকরা জানান, সব কিছুরই দাম বেড়েছে। বছর দেড়েকের মধ্যে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এক ভাটা-মালিক জানান, ২০২০ সালে এক ডাম্পার মাটির দাম ছিল ৪০০০-৫০০০ টাকা। এখন একই পরিমাণ মাটি কিনতে ৮৫০০-৯৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। কাঁচা ইট পোড়াতে কয়লার প্রয়োজন হয়। আগে এক টন কয়লার দাম ছিল ৮০০০ থেকে ৯৫০০ টাকার মধ্যে। এখন কিনতে হচ্ছে ১৭-১৮ হাজার টাকায়। ওই ভাটা-মালিকের কথায়, ‘‘ইট তৈরির খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে গত দেড় বছরে। সেই কারণে ইটের দাম কিছুটা বাড়াতে হলেও লাভের অঙ্ক কমেছে। তার উপরে গরমে শ্রমিক সমস্যা নতুন বিপদ।’’

ভাটা-মালিকদের সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘গরমের সমস্যা কত দিন চলবে কে জানে! গরম কমলেও কাঁচামালের দামের বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা থাকবেই। সমস্যার কথা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। সরকারের তরফে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা সে দিকেই তাকিয়ে আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন