Erosion

Balagarh: বলাগড়ে স্কুল গিলছে গঙ্গা

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯৪৯ সালে স্কুলটি তৈরির সময় গঙ্গা ছিল বহু দূরে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

জিরাট  শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৭:৫৩
Share:

শিয়রে-শমন: স্কুলের দোরগোড়ায় গঙ্গা। ছবি: সুশান্ত সরকার।

চিঠিচাপাঠি কম হয়নি। এ দফতর থেকে সে দফতরে রিপোর্ট গিয়েছে। কিন্তু শেষরক্ষা হল কই!

Advertisement

এ বার জিরাটের চর খয়রামারিতে প্রাথমিক স্কুল গিলতে শুরু করল গঙ্গা। আক্ষরিক অর্থেই গঙ্গা এখন স্কুলের দুয়ারে। ছোটরা পড়বে কোথায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা।

গত এক বছর চর খয়রামারি জিএসএফপি (সরকার পোষিত অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়) স্কুলভবন থেকে গঙ্গা ১০-১২ ফুট দূরে ছিল। ভবনের বাইরের দিকে সিঁড়ি। বুধবার বিকেলে গঙ্গা এগিয়ে এসে সিঁড়ির তলার মাটি ধসিয়ে দেয়। একটি পিলার ‘দখল’ করে নেয়। পড়ুয়ারা দেখে, তাদের হুটোপুটি করার জায়গা কেড়ে নিয়েছে গঙ্গা।

Advertisement

এখানে প্রাক্‌ প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্রছাত্রী ৫২ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা তিন জন। মিড-ডে মিলের দুই কর্মী রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার কাজ চলে। বন্যায় এই স্কুলই ‘ফ্লাড শেল্টার’। প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘সিঁড়ির নীচের অংশসমেত একটা পিলার গঙ্গায় চলে গেল। এসআই, সর্বশিক্ষা মিশনে জানিয়েছি। দ্বিতীয় ভবনটাও চলে গেলে স্কুল বলে কিছু থাকবে না।’’

বিদ্যালয় সূত্রের খবর, স্কুলভবন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর মারফত রাজ্যের শিক্ষা দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তপন বসু বলেন, ‘‘গঙ্গা স্কুলের গায়ে চলে এসেছে। বিষয়টি নজরে আছে। স্কুলটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প জমি পাওয়া গিয়েছে। কাগজপত্র শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। টাকা পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’’
সকলেই মানছেন, দ্বিতীয় ভবন অক্ষত থাকলেও খুদে পড়ুয়াদের জন্য সেখানে যাওয়া নিরাপদ নয়। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওখানে গঙ্গার পাড়ে জলের গভীরতা ১২-১৩ ফুট। বাচ্চাদের নিরাপত্তার
প্রশ্ন জড়িত।’’

ভিটে-মাটি গঙ্গায় চলে যাওয়ার দৃশ্য এ তল্লাটের বাসিন্দাদের কাছে নতুন নয়। বিঘের পর বিঘে কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ধানকল, খেলার মাঠ, বাজার তলিয়ে গিয়েছে নদীর হানাদারিতে। জমিজিরেত হারিয়ে কৃষক বনেছেন খেতমজুর। বেঘর হয়ে কেউ পিছিয়ে গিয়ে ঘর করেন। বহু মানুষ অন্যত্র চলে গিয়েছেন নদীর সঙ্গে লড়াইতে হেরে গিয়ে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯৪৯ সালে স্কুলটি তৈরির সময় গঙ্গা ছিল বহু দূরে। প্রধান শিক্ষক প্রদীপবাবু এই গ্রামেই থাকতেন। এখন জিরাটে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় হাঁটার ভয়ে গঙ্গায় স্নান করতে যেতাম না।’’
গ্রাম বাঁচাতে ভাঙন রোধে ব্যবস্থার দাবিতে স্থানীয় প্রশাসন থেকে দিল্লি পর্যন্ত দরবার করেছেন গ্রামবাসী। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। এক বার গঙ্গায় বাঁশের খাঁচা ফেলা হয়েছিল। ভেটিভার ঘাস চাষ করাও হয়েছিল। কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যে মাত্রায় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। ভেটিভার ঘাসের শিকড় পুরোপুরি মাটিতে ঢোকার আগেই সেই অংশ তলিয়ে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, কংক্রিটের বোল্ডার ফেলে পাকাপাকি ভাবে ভাঙন আটকানোর ব্যবস্থা করা হোক।

সেচ দফতর আশার কথা শুনিয়েছে। নিম্ন দামোদর সেচ দফতরের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল জানান, বলাগড়ে গঙ্গা ভাঙন রোধের জন্য নাবার্ডে (ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট) আবেদন জানানো হয়েছিল। ওই দফতর বিষয়টি দেখছে। শীঘ্রই অনুমোদন মিলবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
গ্রামবাসীরা চান, গঙ্গা আর এগিয়ে আসার আগেই কাজ শুরু হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন