ICC ODI World Cup 2023 Final

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় শামিল কলকাতা থেকে জেলা, দিকে দিকে তেরঙ্গা পতাকা আর নীল জার্সির দাপট

ভারতের নীল জার্সির চাহিদা আচমকাই আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। ২০০ টাকার জার্সি বিকোচ্ছে হাজার টাকায়। মুখে তেরঙ্গা এঁকে প্রস্তুত হচ্ছে কচিকাঁচারা। দেদারে বিক্রি জাতীয় পতাকারও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১১:২৯
Share:

ভারতের নীল জার্সির চাহিদা তুঙ্গে। ছবি— পিটিআই।

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তার পরেই বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে আমদাবাদের সবুজ ঘাসে পা পড়তে চলেছে রোহিতবাহিনীর। আর সেই উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। দেড়শো কোটির বিশাল দেশ যেন থরথর করে কাঁপছে ক্রিকেট-জ্বরে। তার ব্যতিক্রম নয় কলকাতা থেকে জেলা। ধর্মতলার অনতিদূরে ময়দান মার্কেট থেকে জলপাইগুড়ির কদমতলা, হুগলির চুঁচুড়ার খেলার সরঞ্জাম বিক্রির দোকান— লাইন দিয়ে নীল জার্সি কিনছে আট থেকে আটষট্টি।

Advertisement

২০১১ সালে ধোনির ভারত কাপ জিতেছিল শেষ বার। তার পর কেটে গিয়েছে এক যুগ। বিশ্বকাপ অধরাই থেকে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়ার। সেই অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হবে রবিবার? বিশ্বকাপের শুরু থেকে ভারত যা ছন্দ দেখিয়েছে, তাতে আশাবাদী হওয়াই যায়। যদিও পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় কখনওই। কিন্তু বিগত দিনে ভারতীয় দল যে ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে স্রেফ চুরমার করে দিয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি আমদাবাদ দেখলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। রোহিতবাহিনী খেলা শুরুর অপেক্ষায় বসে থাকলেও ইতিমধ্যেই নীল জার্সি পরে মাঠে নেমে পড়েছে গোটা ভারত। আর সে জন্য লাইনের বহর ক্রমশ বাড়ছে ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক দোকানে।

কলকাতার ময়দান মার্কেট। খেলার জগতে এই বাজারের নাম একেবারে উপরের দিকেই থাকবে। খেলাধুলোর হেন কোনও সরঞ্জাম নেই এখানে পাওয়া যায় না। কিন্তু রবিবার সকাল থেকেই সেখানেও যেন বিসর্জনের সুর। শনিবার রাত থাকতে সব নীল জার্সি উড়ে গিয়েছে দমকা হাওয়ার মতো। চাহিদা এবং জোগানের ফারাক বাড়তে বাড়তে ২০০ টাকার জার্সিও শেষ প্রহরে হেলায় বিকিয়ে গিয়েছে হাজার টাকায়। রবিবার সকাল থেকেই ময়দান মার্কেটের সামনে ভিড়। কিন্তু জার্সি যে নেই!

Advertisement

পরিকল্পনা ছিল তিনটি জার্সি কেনার। কোনও মতে একটি জার্সি ডবল দামে কিনে বীরের হাসি হাসতে হাসতে বেরোচ্ছিলেন পাটুলির বাসিন্দা অনিকেত দাস। তিনি বলছেন, ‘‘২০০ টাকার জার্সি ৮০০ টাকায় কিনলাম। কথা ছিল, দুই বোনের জন্য আরও দুটো কিনব। কিন্তু ময়দান মার্কেটে কোথাও জার্সি নেই। একটা দোকানে পেলাম কিন্তু সাইজে হল না। আরও আগে জার্সি কিনে নিলে ভাল হত।’’ ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ী রাজীব চোপড়া। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে খেলার সরঞ্জাম বিক্রি করছেন। তাঁর দোকানেও নীল জার্সি নিঃশেষ। যদিও ক্রেতাদের কমতি নেই। রাজীবকে ব্যাজার মুখেই ফেরাতে হচ্ছে সবাইকে। তিনি বলছেন, ‘‘বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ভারতের জার্সির চাহিদা ছিল। সেমিফাইনালের পর তা আরও বেড়ে গিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে আমার স্টক শেষ। বিরাটের ১৮ নম্বর লেখা জার্সির চাহিদা বেশি। তবে সব ধরনের জার্সিই লোকে কিনছেন। গোটা মার্কেটেই নীল জার্সি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই পুরনো জার্সি বার করছেন। সেগুলিও দেখছি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’’

একই ছবি জেলাতেও। উত্তরের জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণবঙ্গের চুঁচুড়া— সর্বত্রই নীল জার্সি আর তেরঙ্গা পতাকার চাহিদা তুঙ্গে। জলপাইগুড়ির ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক স্পোর্টস লাইটে পড়ে রয়েছে মাত্র কয়েকটি নীল জার্সি। যদিও সেই জার্সি এ বারের নয়, গত বিশ্বকাপের। তাতেও পরোয়া নেই। নীল হলেই হল। চুঁচুড়ার সুকান্ত নগরের একটি খেলার সামগ্রী বিক্রির দোকানে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়। গরম জিলিপির মতোই সেই জার্সি বিকিয়ে যাচ্ছে অকাতরে। দোকানের সামনেই রং, তুলি নিয়ে বসেছেন এক জন। তিনি নামমাত্র দামে লোকজনের মুখে তেরঙ্গা এঁকে দিচ্ছেন। সেখানেও কার্যত লাইন পড়েছে। কচিকাঁচারা মুখে তেরঙ্গা এঁকে প্রস্তুত হচ্ছে। সেই দোকানেই ভারতের নীল জার্সি কিনতে এসেছেন ফুটবলের প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক স্বরূপ দাস। প্রাক্তন ভারত অধিনায়কও বিশ্বকাপ উন্মাদনায় গা ভাসিয়েছেন। বলছেন, ‘‘আমাদের প্রতিপক্ষ এ বার অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিশ্বকাপ জিতবে ভারতই। কোহলী, শামি, রোহিতদের আটকানো যাবে না। দলের প্রত্যেকে যে ভাবে খেলছেন, তাতে আমরাই ফেভারিট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন