উলুবেড়িয়া বাণীতলায় এ ভাবেই ফেলা হয় আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির বর্জ্য অপসারণে এ বার টাকা গুনতে হচ্ছে উলুবেড়িয়া শহরের মানুষকে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতি মাসে বাড়িপিছু ৩০ টাকা এই বাবদ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই এই টাকা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নাগরিকদের অবহিত করতে এ নিয়ে প্রচারও চলছে। বাড়ি থেকে কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) নেওয়ার পরেও
কেন পরিষেবা বাবদ আলাদা টাকা দিতে হবে সেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। একই প্রশ্ন নাগরিকদের একাংশেরও।
পুরপ্রধান তৃণমূলের অভয় দাসের দাবি, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালত ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে নির্মল পরিবেশ এবং নাগরিক পরিষেবা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ। পুরসদস্যদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
পুরসভার দেওয়া সবুজ বালতিতে পচনশীল এবং নীল বালতিতে অপচনশীল আবর্জনা জমিয়ে রাখেন সাধারণ মানুষ। পুরসভার সাফাইকর্মীরা (নির্মল-বন্ধু) বাড়ি
থেকে তা সংগ্রহ করেন। গত কয়েক বছর ধরে এই ব্যবস্থা চলছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে প্রায় ৭৫ হাজার বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে।
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসীম জানার খেদ, ‘‘ভ্যান চালিয়ে খাই। বাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) দিই। তারপরেও আবর্জনা ফেলার জন্য বছরে ৩৬০ টাকা! আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। যেখানে সরকার গরিব মানুষদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প করেছে, সেখানে পুরসভা কী ভাবে এই টাকা নেবে!’’ নাগরিকদের কেউ কেউ অবশ্য পুরসভার এই সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সিপিএম নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সাবিরউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘বাড়িপিছু একটাই কর হয় বলে জানি। তার পরেও ময়লা ফেলার জন্য বছরে ৩৬০ টাকা! তা হলে সব মিলিয়ে বাড়িপিছু মোট কত টাকা বছরে নিচ্ছে পুরসভা! এর বিরুদ্ধে আমরা শীঘ্রই মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামব। এই নাকি গরিব-দরদি সরকার!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুরসভা নাগরিকদের পরিষেবা দিচ্ছে না, পরিষেবা বিক্রি করছে। গায়ের জোরে ভোটে জিতেছে মানুষের থেকে লুটেপুটে খাবে বলে। সেটাই করছে।’’ ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি পুরসদস্য অঞ্জনা অধিকারী বলেন, ‘‘পুরবোর্ডে বিরোধীরা সংখ্যায় কম, তাই
আমাদের কথা শোনা হয় না। বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সের থেকে নাগরিকদের ময়লা ফেলার খরচ বেশি! মানুষ
জবাব দেবে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ মানেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, মানুষের ভালর জন্যই এই পদক্ষেপ। কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা অপচনশীল আবর্জনা থেকে সেখানে জৈব সার তৈরি করা হবে।
প্লাস্টিক, কাচ ইত্যাদি অপচনশীল আবর্জনাও প্রকৃতিতে ফেরানোর ব্যবস্থা হবে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়। শহর হবে জঞ্জালমুক্ত।