‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবির। ফাইল চিত্র।
‘দুয়ারে সরকার’-এর আয়োজনে ব্যস্ত পঞ্চায়েত প্রধানরা। আর তার ফলে কিছুটা হলেও কোপ পড়েছে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচিতে। হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, এর ফলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলায় প্রথম ডোজ়ের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে তা পিছিয়ে যেতে পারে।
কেন এই পরিস্থিতি?
‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরগুলি এখন আয়োজিত হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতভিত্তিক। জেলায় মোট পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৫৭টি। ১৪টি ব্লকের প্রতিটিতে রোজ এক বা একাধিক পঞ্চায়েতে শিবির হচ্ছে। যে পঞ্চায়েতে শিবির হচ্ছে সেই এলাকায় টিকাকরণ কর্মসূচি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যেমন, মঙ্গলবার বাগনান-১ ব্লকের খালোড় পঞ্চায়েতে ছিল টিকাকরণের দিন। কিন্তু এ দিন এই পঞ্চায়েতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হয়। তার ফলে স্থগিত রাখতে হয় টিকাকরণ কর্মসূচি। এমন উদাহরণ একাধিক আছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের বক্তব্য।
শুধু তাই নয়, এখন টিকা কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি করছে পঞ্চায়েতগুলি। আগে এই দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য দফতরের হাতে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। একইসঙ্গে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১২ বছরের সন্তান আছে এমন মায়েদের। কিন্তু প্রধান-সহ পঞ্চায়েতের সদস্যরা ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের আয়োজনে ব্যস্ত থাকায় সময়মতো টিকা প্রাপকদের তালিকা তৈরি হচ্ছে না বলেও দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর শুধু টিকা দেয়। কিন্তু পঞ্চায়েতের কাছ থেকে সময়মতো গ্রহীতাদের তালিকা যদি না আসে বা টিকাকরণ শিবির যদি স্থগিত হয়ে যায় তাহলে আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কী করে?’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও স্বীকার করেছেন, ‘দুয়ারে সরকার’ এবং করোনার টিকাকরণ দু’টি ক্ষেত্রেই প্রধানদের হাতে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার ফলে
কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে টিকাকরণ কর্মসূচি।
গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়েছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। টিকা গ্রহীতাদের তালিকা তৈরিতে স্বজন-পোষণ এবং দলবাজির অভিযোগ উঠেছে প্রধানদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অভিযোগ এসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের থেকেও। সাধারণ মানুষের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কাছে নাম লিখিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করলেও টিকা মিলছে না। অথচ পঞ্চায়েতের নিকটাত্মীয়, শাসকদলের ঘনিষ্ঠদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশও জানিয়েছেন, তালিকা তৈরিতে স্বজন পোষণের অভিযোগ তাঁদের কাছেও এসেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বহু মানুষ আমাদের কাছে এসে জানিয়েছেন তাঁরা অনেক আগে নাম লিখিয়েও ডাক পাননি। আমাদের অনুমান, বেছে বেছে তালিকা তৈরি হওয়ার ফলেই এই দেরি।’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘তালিকা নিয়ে কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ এলে তদন্ত করে দেখা হবে।’’ অন্য দিকে ‘দুয়ারে সরকার’-এর জন্য টিকাকরণ ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দু’টিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। একটির জন্য অন্যটি যাতে ব্যাহত না হয় তা কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা জেলার সকলকেই প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’’