পঞ্চায়েত ভোট আসছে। পাঁচ বছরে কী কী পেলেন সাঁকরাইল ব্লকের বাসিন্দারা? সব সমস্যা কি আদৌ মিটল? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
WB Panchayat Election 2023

না পাওয়ার তালিকা দীর্ঘ, অস্বস্তি তৃণমূলেই

সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আছে। এর মধ্যে থানামাকুয়া, পাঁচপাড়া, দুইল্যা, ঝোড়হাট, আন্দুলের চেহারা বদলাচ্ছে দ্রুত।

Advertisement

নুরুল আবসার

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:২০
Share:

আলমপুর থেকে আন্দুল বাজার যাওয়ার বেহাল রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার খুব কাছের এই সাঁকরাইল ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় লেগেছে শহুরে হাওয়া। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কারখানা, বাড়ি আর বহুতল। শহুরে এই আগ্রাসনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সমস্যাও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিষেবার মান এখানে উন্নত নয়। শুধু তাই নয়, পথবাতি, রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা, যোগাযোগের মাধ্যম— নানা বিষয় নিয়েই রয়েছে ক্ষোভের পাহাড়।

Advertisement

সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আছে। এর মধ্যে থানামাকুয়া, পাঁচপাড়া, দুইল্যা, ঝোড়হাট, আন্দুলের চেহারা বদলাচ্ছে দ্রুত। যতটা গতিতে বহুতল উঠছে, তেমন গতিতেই এলাকার নিকাশি সমস্যা বাড়ছে বলে এলাকাবাসীর ক্ষোভ। কারখানা ও বহুতল করার জন্য জমি উঁচু করা হচ্ছে। এর ফলে পাশের এলাকাগুলি নিচু হয়ে জল জমে যাচ্ছে। বর্ষার সময় এখন এলাকার অনেক এলাকায় এক কোমর অবধি জল জমে যায়।

শুধু তাই নয়। যতই ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে রাস্তার কাজ হোক, পাড়ার ভিতরের রাস্তার কোনও সংস্কারই হয়নি বলে অভিযোগ। আলমপুর থেকে আন্দুল বাজার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার হাল শোচনীয়। এমনিতে তো দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। তার উপরে বর্ষার সময় পিচ উঠে গর্ত হয়ে যাওয়া অংশে জল জমে যায়। ফলে তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিপাকে পড়েন মাশিলা পঞ্চায়েতের দশটি এলাকার বাসিন্দা।

Advertisement

এখনও এই এলাকার অনেক বাড়িতেই পানীয় জল পৌঁছয়নি। যে নলকূপ এবং রাস্তার ধারে পানীয় জলের কলগুলি আছে, সেগুলি বেহাল পড়ে। ঝোড়হাটের বানুপুর-২ পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, তাঁদের এলাকায় এখন সামান্য বৃষ্টিতে জল জমছে। রাস্তায় আলো নেই। ঠান্ডা পানীয় জলের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেটাও বেহাল।

এলাকাবাসীর এমন ক্ষোভ সামাল দিতে প্রস্তুত নয় তৃণমূলের ক্ষমতাধীন পঞ্চায়েত সমিতি। সব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা পঞ্চায়েতের হাতে নেই বলেই দায় সারছে তারা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষের সাফাই, ‘‘এলাকা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকাশি সমস্যা যে ভাবে বাড়ছে, তার মোকাবিলা করা পঞ্চায়েতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবুও অনেক কাজ করা হয়েছে।’’

উল্টে এই ব্লক কী পেয়েছে, সেই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা জানান, সাঁকরাইলে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার জল প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। গঙ্গা থেকে জল তুলে তা শোধন করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। এই প্রকল্পটি হয়ে গেলে জলের সমস্যা আর থাকবে না। দূষণ সমস্যা মেটাতে বেশ কিছু প্রকল্প হাত নিয়েছে সমিতি। তিনটি পঞ্চায়েতে কঠিন বর্জ‍্য পরিচালন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দু’টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকল্প গড়ার জন্য জমি চিহ্নিতও করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে এই পঞ্চায়েত সমিতির। ২০২০ সালে আমপান-দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল খোদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্তর। তবে সেই প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বিডিওর নেতৃত্বে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়ে তদন্ত হয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া হয়। বাকি যাঁদের নাম তালিকায় ছিল কাউকে টাকা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করা হয়েছে।’’

এই দুর্নীতি আর অনুন্নয়ই হাতিয়ার বিরোধীদের। আলমপুরের কংগ্রেস নেতা অলোক কোলে বলেন, ‘‘যত্র যত্র কারখানা আর বহুতল উঠছে। পঞ্চায়েত সমিতির কোনও নজরই নেই। একটা নৈরাজ্য চলছে।’’ যদিও পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, বহুতল বা কারখানাগুলির ক্ষেত্রে অনুমতি আসে রাজ্যস্তর থেকে। সেখানে তাদের কিছু করার নেই।

সিপিএম নেতা নন্দলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা গড়তে ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে এই পঞ্চায়েত সমিতি ব্যর্থ।’’ বিজেপি নেতা সুব্রত বাগ বলেন, ‘‘পরিকল্পনাহীন ভাবে কাজ করেছে তৃণমূলের এই পঞ্চায়েত সমিতি। না হলে পাঁচ বছর পরে নিকাশি, জল, দূষণ, পথবাতি নিয়ে এত অভিযোগ উঠত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন