—প্রতীকী চিত্র।
ঝগড়া চলছিল ফোনে। ও পার থেকে তারস্বরে স্বামী বলেছিলেন, ‘‘জেলে যখন যেতেই হবে তোকে মেরেই যাব!’’ ভয় পেয়ে বাড়ি ছেড়ে এক আত্মীয়ের কাছে যাচ্ছিলেন বধূ। সঙ্গে ছিল দুই নাবালক সন্তান এবং এক প্রতিবেশিনী। কিন্তু রাস্তাতেই মুখোমুখি হলেন স্বামী-স্ত্রী। সেখানে সত্যিই স্ত্রীকে পিটিয়ে মেরে ফেললেন স্বামী! চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির দাদপুর থানার বিলাতপুর এলাকায়। ২৮ বছরের বধূর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চলছে স্বামীর খোঁজ।
পুলিশ সূত্রে খবর, সিঙ্গুরের পায়ড়াউড়া গ্রামে বাড়ি রজব আলি ও মঞ্জুরা খাতুনের। পরিবারের দাবি, ওই দম্পতির মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে অশান্তি চলছিল। সেখান থেকে এই খুন। মৃতার দাদা শেখ রফিক বলেন, ‘‘এক বার তো বন্ধুদের নিয়ে বোনকে মারধর করেছিল রজব। সেটা দিন পনেরো আগের ঘটনা।’’ তিনি জানান, ওই ঘটনার পরে ভদ্রেশ্বরে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন মঞ্জুরা। তার পর স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই খবর পেয়ে ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন রজব। স্ত্রীকে বলেন, ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে আবার সংসারে ফিরে আসতে।
স্বামীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরেছিলেন মঞ্জুরা। এর মধ্যে দিন দুয়েক আগে ভদ্রেশ্বর থানার শ্বেতপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ফোন করা হয় রজবকে। বলা হয়, তাঁর নামে অভিযোগ রয়েছে। থানায় গিয়ে যেন তিনি কথা বলেন।
মঞ্জুরার বাপের বাড়ির অভিযোগ, ওই ফোন পাওয়ার পরে আবার স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করেন রজব। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তিনি স্ত্রীকে ফোন করে হুমকি দেন। জানিয়ে দেন, বধূ নির্যাতনের দায়ে জেলে যখন যেতেই হবে, স্ত্রীকে খুন করেই জেলে যাবেন।
ওই কথা শুনে ভয় পেয়ে যান মঞ্জুরা। বাপের বাড়িকে জানিয়ে দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে কাছে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিলাতপুরের কাছে তাঁকে ধরে ফেলেন স্বামী। এক প্রতিবেশিনীকে দিয়ে দুই সন্তানকে বন্ধুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মঞ্জুরা। নিজে দৌড় পালানোর চেষ্টা করেন। অভিযোগ, তাঁকে তাড়া করে ধরে ফেলেন স্বামী। এর পর লাঠির ঘা বসাতে থাকেন সারা শরীরে। পিটিয়ে পিটিয়ে রাস্তাতেই খুন করে ফেলেন স্ত্রীকে।
মঞ্জুরার সঙ্গে থাকা ওই প্রতিবেশিনী তাঁর বাপের বাড়িতে খবর দেন। এর পর রাতেই পুলিশ গিয়ে রাস্তা থেকে দেহ উদ্ধার করে। রবিবার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু রজব পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে দেহের ময়নাতদন্ত হচ্ছে। পলাতক যুবকের খোঁজ করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।