আমতা ২ ব্লক

১০ বছরেও সেতু হয়নি, নৌকাই ভরসা দ্বীপবাসীর

ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরে প্রায় দশ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু সেতু আজও হল না। ভাটোরা ও ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা সেই খেয়া।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

নৌকায় চলছে পারাপার। ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরে প্রায় দশ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু সেতু আজও হল না। ভাটোরা ও ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা সেই খেয়া।

Advertisement

ভাটোরা ও ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান পঞ্চায়েত আমতা ২ নম্বর ব্লকের মধ্যে পড়ে। কলকাতা থেকে এই দু’টি পঞ্চায়েতের দূরত্ব মেরেকেটে ৭০ কিলোমিটার হবে। কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার লোকের বসবাস। দ্বীপটি রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী নদী বেষ্টিত। ফলে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের মাধ্যম একমাত্র খেয়া পারাপার। সে জন্য এই দুই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপরে একটি পাকা সেতুর দাবি করে আসছেন।

দ্বীপবাসীর আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০০৬ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত কুলিয়া সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তা দেখে এই দুই এলাকার বাসিন্দারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তাঁদের আর খেয়া পার করে গন্তব্যে যেতে হবে না। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরে রাজনীতিতে অনেক পালাবদল হয়েছে। বিগত বাম সরকার ও বর্তমানে তৃণমূল সরকারের সময়ে আরও বার পাঁচেক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। শুধু ওই পর্যন্তই। পাল্টায়নি এই দ্বীপবাসীর দুর্দশার ছবি।

Advertisement

সেতু তৈরি করতে সমস্যা কোথায়?

হাওড়া জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে সেতুটি তারাই তৈরি করার পরিকল্পনা করে। নাবার্ড সে জন্য ৭ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়। কিন্তু তিন বার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। কিন্তু কম টাকার কারণে কোনও ঠিকাদারই এই টেন্ডারে যোগ দেয়নি। ফের জেলা পরিষদ কাজের খরচ বাবদ ৯ কোটি চায় নাবার্ডের কাছে। নাবার্ড সেই টাকাও দিতে রাজি হয়। কিন্তু তার পরেও এই কাজ কোনও ঠিকাদার করতে রাজি হয়নি।

ইতিমধ্যে ২০১৩ সালে জেলা পরিষদে ক্ষমতার হাতবদল হয়। ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। তারা সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, এত কম টাকায় সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজন ২৭ কোটি টাকা। হাওড়া জেলা পরিষদের এত টাকা নেই। ফলে তাদের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। জেলা পরিষদ রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরকে এই কাজ করার জন্য বলে। কিন্তু তারা সম্মত না হওয়ায় জেলা পরিষদ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকেই সেটা করার জন্য বলে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সেতুটি করতে রাজি হয়।

আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে সেতু নিয়ে জেলা প্রশাসনকে বলেছি। এমনকী বিধানসভায়ও বলেছি। প্রশাসনের তরফে শুধুই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।’’

এই জটিলতার মধ্যে নিজেদের খরচে বছর খানেক আগে স্থানীয় ঘাটমাঝি নদীর উপরে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন এলাকার বাসিন্দারা। সেটাকে সামনে রেখেই তাঁদের জীবন যাত্রার অনেক পরিবর্তন আসে। বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়েই গাড়ি চলছে। ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান ও ভাটোরা পঞ্চায়েতের অনুমতিক্রমে জয়পুর রুটের খান পনেরো অটো, ছোট গাড়ি চলছে। অনুন্নয়নের অন্ধকারে পড়ে থাকা ভাটোরার খানাখন্দে ভরা ইট ও কাঁচা রাস্তা, ওলি-গলি দিয়েই বিপজ্জনকভাবে সেই গাড়ি চলছে। কিন্তু বর্ষা নামলেই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ি চালকদের ক্ষোভ, সেতু তৈরি করা তো দূরের কথা। রাস্তাঘাট পর্যন্ত সারানো হচ্ছে না। রাস্তাঘাট এতটাই খারাপ যে, যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বর্ষায় সময় ঘন্টার পর ঘণ্টা হেঁটেই যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষজনকে।

এলাকাবাসীর দাবি, কুলিয়ায় পাকা সেতুটি হলেই এই সমস্যা থাকত না। কিন্তু সেটা না হওয়ায় এলাকার রাস্তাঘাট-সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যত স্তব্ধ। এর জন্য তাঁরা হাওড়া জেলা প্রশাসনকে দায়ী করছেন। ভাটোরার বাসিন্দা পরিমল কর বলেন, ‘‘আমরা চাই হাওড়া জেলা প্রশাসন দ্রুত পাকা সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করুক। তাতে এলাকার রাস্তা ঘাট-সহ সামগ্রিক উন্নতি হবে।’’

হাওড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সেতু তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ডিপিআর (ডিটেলস প্রোজেক্ট রির্পোট) তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement