শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৪০০ কোটি টাকার উপরে বকেয়া রয়েছে।—প্রতীকী ছবি।
অর্থবর্ষ শেষ হতে এখনও বাকি। তার আগেই সপ্তাহখানেক ধরে হুগলি জেলায় কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। বেশিরভাগ পঞ্চায়েতেই দাবি জানিয়েও কাজ পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। ফলে, তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। সামনে লোকসভা ভোট। এই আবহে শ্রমিকদের কাজ দিতে না-পেরে ক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত প্রধানরাও।
কিন্তু কেন বন্ধ কাজ?
বিডিওদের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে উঠে আসা শ্রম-বাজেট (লক্ষ্যমাত্রা) অনুসরণ না-করে রাজ্য এবং জেলা প্রশাসন যে শ্রমদিবস (একজন শ্রমিকের এক দিনের কাজ) তৈরির অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে, তার জেরেই এই অবস্থা। যেন তেন প্রকারে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়েই শ্রম-বাজেট মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ওই বিডিওদের দাবি।
যদিও প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “কাজ পুরোপুরি বন্ধ করতে বলা হয়নি। তবে এটা বাস্তব, জেলা শ্রম-বাজেট ১৬৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৪০০ কোটি টাকার উপরে বকেয়া রয়েছে। ওই দায় মেটানোর ঝুঁকি সামালতেই কাজ কমাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের সব জেলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বকেয়া সামলাতে রাজ্যস্তর থেকেই কাজ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে হুগলির ২০৭টি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে উঠে আসা কাজের চাহিদা অনুযায়ী শ্রম-বাজেট ছিল ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭১৬টি শ্রমদিবস তৈরির। সপ্তাহখানেক আগে শেষ মাস্টাররোল বের হওয়া পর্যন্ত কাজ হয়ে গিয়েছে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৪৯ শ্রমদিবসের।
জেলায় সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে গোঘাট-১ ব্লকে। সেখানে সাতটি পঞ্চায়েত মিলিয়ে শ্রম-বাজেট ছিল ৫ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৬০টি শ্রমদিবসের। কিন্তু কাজ হয়েছে ১৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৬১টির। এমন বেশি কাজের নজির আরও রয়েছে। জেলার মধ্যে খালি চুঁচুড়া-মগরা ব্লক তাদের শ্রম-বাজেট ছুঁতে পারেনি। ওই ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের শ্রম-বাজেট তথা লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬৩৭টির। গত বুধবার পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ১৫৯টির। শতাংশের হারে ৭২.১৪।
জেলা প্রশাসনের দাবি, শ্রমদিবস তৈরিতে রাজ্যের শীর্ষে রয়েছে হুগলি। বর্তমানে জেলায় জবকার্ড রয়েছে, এমন পরিবারের সংখ্যা ৭১ লক্ষ ৮ হাজার ৮১০টি। তাঁদের মধ্যে কাজ করেছেন ৪১ লক্ষ ৩ হাজার ৯৯২টি পরিবারের সদস্যেরা। এঁদের মধ্যে আবার ১০০ দিন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ২৭৬টি পরিবারের। হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাকি শ্রমিকেরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
১০০ দিন কাজ সম্পূর্ণ করতে না-পারা শ্রমিকদের মধ্যে গোঘাটের সুবীরচকের কল্পনা ভুঁইয়ার ক্ষোভ, ‘‘দাবি জানিয়েও কাজ পাচ্ছি না।’’ ধনেখালির গোপীনাথপুরের শ্রীকান্ত মালিকের অভিযোগ, ‘‘প্রকল্পের আইন অনুযায়ী কাজ চাইলে প্রশাসন দিতে বাধ্য। কিন্তু কোথায় কাজ? পঞ্চায়েত এবং ব্লক থেকে বলা হচ্ছে, এপ্রিল মাসের পর কাজ মিলবে। এত দিন চলবে কী করে?’’