জরাজীর্ণ: এমনই বেহাল দশা ডুমরজলায় হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের সেই আবাসনের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
চারতলা ফ্ল্যাটগুলির দেওয়ালে বট-অশ্বত্থের জটলা। দীর্ঘ দিন ধরে মেরামতির অভাবে যে জরাজীর্ণ ‘খণ্ডহর’-এর ছবি ভেসে ওঠে, ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি। ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ে দৃশ্যমান লোহার রড। বিপজ্জনক ভাবে ভেঙে ঝুলছে চারতলা ছাদের আলসেও। বৃষ্টির জল আটকাতে বহু ঘরের মধ্যেই কংক্রিটের ছাদের নীচে ঝোলানো আছে প্লাস্টিক। দেওয়ালের অবস্থাও তথৈবচ।
হাওড়া শহরের রাস্তাঘাট, পার্ক তৈরির জন্য উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের কথা ভেবে ছ’য়ের দশকে হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (এইচআইটি) এই ডুমুরজলা আবাসনটি তৈরি করে। সামান্য ভাড়ায় তাঁদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল এখানে। কিন্তু সেই থেকে এখনও পর্যন্ত সামান্য চুনকামও করা হয়নি। এক দিনের জন্যও ইট-বালি-সুরকি নিয়ে কাউকে কাজ করতে দেখা যায়নি সেখানে। নিম্ন মধ্যবিত্ত বাসিন্দারাও নিজেরা খরচ করে সরকারি ফ্ল্যাট সারাতে উদ্যোগী হননি।
আবাসনে মোট ৮টি চারতলা বাড়ি আছে। তাতে ৪২টি পরিবারের বাস। নয় নয় করে ৪০ বছরের বেশি তাঁরা আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন মাথা গোঁজার এই ঠাঁই। অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এইচআইটি দীর্ঘ দিন কাজ তো করেইনি, উল্টে ১৯৯৫ সালে নিজেরাই এই ৮টি চারতলা বাড়িকে ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি কিছু বদলায়নি। বাসিন্দারা যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন।
এখন থেকে পাঁচ বছর আগে বাড়িগুলির ভগ্নদশা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারেরা পরীক্ষায় নামেন এবং তাঁরাও এই বাড়িগুলিকে বিপজ্জনক ও মানুষের বসবাসের অযোগ্য বলে রায় দেন। অভিযোগ, তার পরেও জরাজীর্ণ বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা হয়নি বা আবাসিকদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়নি। বাসিন্দা পদ্মবালা হাজরা বলেন, ‘‘ঝ়ড় এলে আমরা আতঙ্কে কাঁপি। মেঘ ডাকলে ভয় পাই। যে কোনও দিন বাড়িগুলি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে জেনেও প্রাণ হাতে নিয়ে বাস করি।’’
এইচআইটি সূত্রে খবর, শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্ট পেয়ে ২০১২ সালে আবাসিকদের অন্যত্র সরিয়ে বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবাসিকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য কাছেই বারুইপাড়া ফার্স্ট বাই লেনে এইচআইটি নতুন আবাসন তৈরি করে। সেখানে বসবাসের জন্য ২৪টি পরিবার রাজি হলে, পরিবার পিছু এইচআইটি কর্তৃপক্ষ ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে নেন। ২০১৩ সালে ৭ জুলাই ফ্ল্যাট বরাদ্দের চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, তার পরেও চার বছর কেটে গিয়েছে। টাকা দিয়েও নতুন ফ্ল্যাটের চাবি হাতে পাননি তাঁরা। দিনের পর দিন এইচআইটির দরজায় দরজায় ঘুরেও লাভ হয়নি।
এইচআইটির চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার দেবল ঘোষ বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমি একটি কথাও বলব না। কিছু জানিও না। তা ছাড়া আমি এখন চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করছি।’’ চেয়ারম্যান তথা বালির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ বলেন, ‘‘টাকা নেওয়ার পরেও কেন ফ্ল্যাট দেওয়া হয়নি, তা অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব। দু’দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’