কতদূর ছড়ানো জাল, তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ

আইপিএল জুয়ার চক্র, গ্রেফতার ৬

তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই জুয়ারিরা নির্দিষ্ট দলের জেতা-হারা বা নির্দিষ্ট কোনও ব্যাটসম্যানের আউট বা রান ইত্যাদির ব্যাপারে টাকা লাগাত। বাজারদর অনুযায়ী টাকার হিসেব হতো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৭
Share:

ফাঁদ: নির্মীয়মাণ এই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় জুয়া-চক্রে জড়িত অভিযুক্তদের। উদ্ধার হওয়া মোবাইল ও টাকা (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

থানার নাকের ডগায় নির্মীয়মাণ একটি আবাসনে চলছিল আইপিএল জুয়া-চক্র। পুলিশ টের পেতেই চক্রের পর্দা ফাঁস হল। বুধবার রাতে হুগলির শ্রীরামপুরের টিনবাজার থেকে চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

ধৃতদের নাম মহম্মদ মঞ্জুর ওরফে রাজু ওরফে চাঙ্কু, মহম্মদ ইউসুফ ওরফে গুড্ডু, সানি সাউ, সুরজিৎ বিশ্বাস ওরফে তুতুল, সুরেশ রাজভর এবং আকাশকুমার চৌবে। প্রত্যেকেরই বাড়ি টিনবাজার বা তার আশপাশে। তাদের কাছ থেকে নগদ কয়েক হাজার টাকা, ছ’টি মোবাইল ফোন এবং কাগজপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অতুল ভি বলেন, ‘‘আইপিএল নিয়ে
জুয়া-চক্র চলছিল। ছ’জন ধরা পড়েছে। টাকা, মোবাইল ছাড়াও কে কত টাকা জুয়ায় লাগিয়েছে, সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ ওই পুলিশকর্তা যোগ করেন, ‘‘চক্রের জাল কতদূর ছড়ানো, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, বড় চক্রই জড়িত রয়েছে এর পিছনে।’’

Advertisement

কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট সূত্র মারফত খবর পেয়ে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ বুধবার রাত ১০টা নাগাদ বাহিনী নিয়ে ওই আবাসনে হানা দেন। আবাসনের তিনত‌লার একটি ফ্ল্যাটে জুয়া-চক্র চ‌লছিল। ছ’জন হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়। জালিয়াতি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং জুয়া আইনের ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রত্যেককেই ৫ দিন পুলিশ হেফজতের নির্দেশ দেন।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, জনৈক রাজু খটিক আবাসনটি তৈরি করেছেন। ফ্ল্যাটটি তাঁর কাছ থেকে কেউ কিনেছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। পুলিশের জেরায় ধৃতেরা জানায়, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা বেটিং চালাত। আদর্শ অগ্রবাল নামে সল্টলেকের এক জুয়াড়ির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

কী ভাবে চলত কাজ?

তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই জুয়ারিরা নির্দিষ্ট দলের জেতা-হারা বা নির্দিষ্ট কোনও ব্যাটসম্যানের আউট বা রান ইত্যাদির ব্যাপারে টাকা লাগাত। বাজারদর অনুযায়ী টাকার হিসেব হতো। কোনও জুয়াড়ি কত টাকা লাগাচ্ছে, তার প্রমাণ রাখা হত মোবাইলের ভয়েস রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘একটি খেলাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার বাজি ধরা হয়। তবে ধৃতেরা নেহাতই চুনোপুটি বলে মনে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাঘব বোয়ালদের হাতে।’’

বাজেয়াপ্ত হওয়া কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ম্যাচে কে কত টাকা লাগিয়েছে তার হিসেব রয়েছে। পুলিশ মনে করছে, রিষড়া এবং কলকাতার জুয়াড়িদের সঙ্গে ধৃতদের যোগ রয়েছে। কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, ‘‘কয়েকটি নাম সামনে এসেছে। তাদের চিহ্নিত করে ধরা হবে। সব জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন