স্থায়ী শিক্ষক ছাড়াই চলছে বলাগড়ের স্কুল

শিক্ষকেরা জানান, পড়ুয়ার সংখ্যার অনুপাতে অন্তত ১৩ জন শিক্ষক প্রয়োজন।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

বলাগড় শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০২:৪২
Share:

ঠাকুরদালানে চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র

এক জন অতিথি-শিক্ষক। তিনিই টিচার-ইনচার্জ। বাকী আট শিক্ষক-শিক্ষিকা স্বেচ্ছাশ্রম দেন। করণিকের কাজও সামলান। এ ভাবেই চলে হুগলির বলাগড় ব্লকের ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের ‘বগা শ্রীকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়’। গত বছর মাধ্যমিকের স্তরে উন্নীত হয়েছে স্কুলটি।

Advertisement

বছর সাতেক আগে শ্রীকান্ত গ্রামে ওই বিদ্যালয় তৈরি হয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে। স্কুল বলতে সাকুল্যে তিনটি ঘর। কিছু ক্লাস চলে পাশের ঠাকুরদালানে। শ্রীকান্ত,

ভগবতীতলা, কদমডাঙা, মালিবেড়, নাইরজা, সাধুবাঙালি, চণ্ডীগাছা-সহ অন্তত দশটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া ২২০ জন। তার মধ্যে তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত ছেলেমেয়ে ২১৮ জন।

Advertisement

টিচার ইনচার্জ মধুসূদন দাস কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। অতিথি-শিক্ষক হিসেবে তিনি সামান্য সাম্মানিক পান। বাকিরা অবৈতনিক। তাঁদের কেউ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, কেউ বেকার। শ্রীকান্ত গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ্তা রাউত বলেন, ‘‘আমার বাবা চাষি। কষ্ট করে বিএ পাশ করেছি। চাকরি পাইনি। গ্রামের ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে বিনা বেতনেই এখানে পড়াই। ভবিষ্যতে সরকার হয়তো আমাদের কথা ভাববে।’’ ২০১২ সালে কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন জয়দেব দাস। পরের বছরেই শ্রীকান্ত গ্রামের স্কুলটিতে পড়াতে শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বেতন না পেলেও ছেলেমেয়েগুলো শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালে পরিশ্রম সার্থক হবে।’’ আগামী বছর মাধ্যমিকের প্রথম ব্যাচ। ২৬ জন পরীক্ষা দেবে।

শিক্ষকেরা জানান, পড়ুয়ার সংখ্যার অনুপাতে অন্তত ১৩ জন শিক্ষক প্রয়োজন। সম্প্রতি তাঁরা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে এ ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, স্কুল ভবনে সকলের বসার জায়গা নেই। মিড-ডে মিলের আলাদা ঘর নেই। ঠাকুর দালানেও ঠাঁই নাই অবস্থা। বৃষ্টিতে নাজেহাল হতে হয়। এই অবস্থায় প্রতি বছর পড়ুয়ার সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা না বাড়ালে সমস্যায় পড়তে হবে।

মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘স্কুলের শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতি বছর পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ছে। অথচ, শিক্ষক নিয়োগের জন্য বারবার স্কুল পরিদর্শককে লিখিত ভাবে জানানো হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। এত দিন যাঁরা বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন, তাঁদের সাম্মানিক দেওয়া হোক।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গ্রামবাসী এবং অবসরপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষক স্কুল চালাতে যে ভাবে সহযোগিতা করছেন তা অভাবনীয়। গ্রামবাসী স্কুলের জমি দান করেছেন। দরকারে আরও জমি দিতে ইচ্ছুক। সরকার ক্লাসরুম তৈরির

টাকা দিলে জমির সমস্যা হবে না। তবে সব থেকে আগে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা জরুরি।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সুব্রত সেন বলেন, ‘‘ওই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন