রিপোর্ট বলছে, যক্ষা নেই ছাত্রীর

স্কুলের বদনাম হচ্ছে! বিক্ষোভ সহপাঠীদের

ডাক্তারি পরীক্ষায় পরিষ্কার, ছাত্রীটির শরীরে যক্ষার উপস্থিতি নেই। কিন্তু চণ্ডীতলার বরিজহাটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে এ বার স্কুলে ঢুকতে দিল না কিছু সহপাঠী। দফায় দফায় পুলিশ-প্রশাসনের দফতরে বিক্ষোভ, অবরোধও করল তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

নালিশ: বিডিওর সামনে বিক্ষোভ ছাত্রীদের। নিজস্ব চিত্র

ডাক্তারি পরীক্ষায় পরিষ্কার, ছাত্রীটির শরীরে যক্ষার উপস্থিতি নেই। কিন্তু চণ্ডীতলার বরিজহাটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে এ বার স্কুলে ঢুকতে দিল না কিছু সহপাঠী। দফায় দফায় পুলিশ-প্রশাসনের দফতরে বিক্ষোভ, অবরোধও করল তারা। লাটে উঠল পড়াশোনা। ফলত, ওই স্কুলে মেয়েটি আদপে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ পাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।

Advertisement

মাস খানেক আগে মেয়েটির কাশি হয়েছিল। যক্ষার ‘নিদান’ দিয়ে প্রধান শিক্ষিকা তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেন বলে অভিযোগ। গত বুধবার মেয়েটি বিডিও (চণ্ডীতলা-২) অভ্রজ্যোতি পালের দ্বারস্থ হয়। বিষয়টি সামনে এলে স্কুলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পঞ্চায়েত প্রধান তথা বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্য তন্দ্রা আটা মেয়েটিকে স্কুলে দিয়ে আসেন। তার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টও এসে গিয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, মেয়েটির শরীরে যক্ষার জীবাণু নেই।

কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে জনা পঞ্চাশ ছাত্রী স্কুলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের বক্তব্য, মেয়েটির জন্য স্কুলের বদনাম হয়েছে। তাকে বরখাস্ত করতে হবে। সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ মেয়েটি বাবার সঙ্গে স্কুলে আসছিল। ওই ছাত্রীদের বাধায় সে স্কুলে পৌঁছতেই পারেনি বলে অভিযোগ। ঘটনার জেরে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পোস্টার হাতে বিক্ষোভকারী মেয়েরা দাবি করতে থাকে, এলাকার তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় ইন্ধন দিয়েছেন। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।

Advertisement

বিডিও এবং অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক চৈতালি কর্মকার স্কুলে আসেন। তাঁদেরও ঢুকতে বাধা দেয় ছাত্রীরা। পরে তাঁরা প্রধান শিক্ষিকা রিনা রায়ের সঙ্গে কথা বলেন। বিক্ষোভকারী ছাত্রীরা চণ্ডীতলা থানা, বরিজহাটি পঞ্চায়েতের সামনে অহল্যাবাঈ রোড অবরোধ করে। চণ্ডীতলা চৌমাথায় অবরোধ করলে যাত্রীদের সঙ্গে তাদের বচসা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়। বিডিও নিজে বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।

ছাত্রীদের বিক্ষোভ নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘মেয়েটির রোগ ধরা পড়েনি। এখানে নির্বিঘ্নেই ও পড়তে পারবে।’’ বিডিও বলেন, ‘‘একটা সমস্যা হয়েছিল। মিটে গিয়েছে। মেয়েটি ওই স্কুলেই পড়বে।’’

বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের অনেকেই অবরোধ বা বিক্ষোভের কারণ বলতে পারেনি। দশম শ্রেণির একটি মেয়ের কথায়, ‘‘স্কুলের এক দিদিদের কথায় এসেছি।’’ কারও কথায়, ‘‘শুনেছি মেয়েটা বড়দিকে অপমান করেছে। তাই এসেছি।’’

অনেকেরই বক্তব্য, ছাত্রীদের আন্দোলনের নেপথ্যে কারও ইন্ধন থাকতে পারে। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজে মেয়ের বাবা। মেয়েটির কথা শুনে তাকে সাহায্য করেছি। স্কুলের ভূমিকা অমানবিক মনে হওয়ায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছি। আসলে মেয়েগুলোকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। ওদের দোষ নেই।’’

অনেকেরই বক্তব্য, যে আশঙ্কা করে মেয়েটিকে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল, তা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। এই পরীক্ষা স্কুলই উদ্যোগী হয়ে করাতে পারত। স্কুল নিজেদের ভূমিকা ঠিক ভাবে পালন না করাতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন