চন্দননগরে রেস্তরাঁয় হানা পুরকর্তাদের

ফ্রিজে বাসি মাংস, হুঁশিয়ারি মেয়রের

ভাগাড়-কাণ্ড সামনে আসার পরে শনিবার শহরের নানা রেস্তরাঁয় হানা দিয়ে চক্ষু চড়কগাছ মেয়র-সহ পুরকর্তাদের। কোথাও মিলল দুর্গন্ধে ভরা বিরিয়ানি, কোথাও ফ্রিজে ভরা বাসি-শক্ত মাংস!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ০১:২৬
Share:

বিষাক্ত: ফেলে দেওয়া হচ্ছে পচা বিরিয়ানি।

গত কয়েক বছরে চন্দননগরে একের পর এক রেস্তরাঁ খুলেছে। কিন্তু সেখানে খাবারের মান?

Advertisement

ভাগাড়-কাণ্ড সামনে আসার পরে শনিবার শহরের নানা রেস্তরাঁয় হানা দিয়ে চক্ষু চড়কগাছ মেয়র-সহ পুরকর্তাদের। কোথাও মিলল দুর্গন্ধে ভরা বিরিয়ানি, কোথাও ফ্রিজে ভরা বাসি-শক্ত মাংস!

সকাল ১০টা। মেয়র রাম চক্রবর্তী দলবল নিয়ে প্রথমে হানা দেন স্টেশন রোডের কয়েকটি রেস্তরাঁয়। একটি রেস্তরাঁর কিছুটা নামানো শাটার উঠিয়েই ঢোকেন তাঁরা। সেই সময় ওই রেস্তরাঁর কর্মীরা ফ্রিজ থেকে বিরিয়ানি প্যাকেটবন্দি করছিলেন। সেই বিরিয়ানি থেকে ভ্যাপসা-পচা গন্ধ পেয়ে ক্ষুব্ধ হন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র-ইন-কাউন্সিল পার্থ দত্তের। সেইসব প্যাকেট টেনে ফেলে দেন পুরকর্মীরা। ওই রেস্তরাঁর মালিক বীরেন্দ্রনাথ দে অবশ্য পার্থবাবুদের কাছে দাবি করেন, ‘‘এখন নষ্ট খাবার রাস্তায় ফেলা যায় না। তাই ওইসব খাবার কুকুরকে দেওয়ার জন্যই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’’ কিন্তু তাতে পার্থবাবুদের সংশয় যায়নি। ওই পুরকর্তা বলেন, ‘‘রেস্তরাঁ-মালিকের দাবি খতিয়ে দেখা হবে।’’

Advertisement

এর পরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলের ফ্রিজ খুলে শক্ত খাসির মাংস দেখে বেজায় ক্ষুব্ধ হন মেয়র রাম চক্রবর্তী। তিনি ওই রেস্তরাঁ-মালিককে সতর্ক করেন, ‘‘দিনের পর দিন ফ্রিজে রাখা বাসি-শক্ত মাংস মানুষকে পরিবেশন করা যাবে না। এরপর কিন্তু এইসব হলে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।’’ এর পরে আর রেস্তরাঁ-মালিক কোনও মন্তব্য করেননি।

শুধু স্টেশন রোডই নয়, এ দিন শহরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার, গঞ্জের বাজার, জিটি রোড, স্টেশন রোড-সহ বিভিন্ন এলাকার রেস্তরাঁ এবং মাংসের দোকানে হানা দেন পুরকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, শুধু বাসি-পচা মাংস ব্যবহারই নয়, বেশিরভাগ রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ খাবার সংরক্ষণের ব্যাপারেও ন্যূনতম স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা নেন না। পুরকর্তারা জানান, মাংস দিয়ে যে সব খাবার তৈরি করা হয় তার ‘গ্রেভি’ অর্থাৎ ঝোল বহু আগে থেকে ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়। প্রয়োজনমাফিক সেই বাসি ঝোল ক্রেতাদের পরিবেশন করা হয়। এ দিন কয়েকটি রেস্তরাঁ থেকে পুরসভার ওই তদন্তকারী দলটি ওইসব ‘গ্রেভি’ ফেলে দেয়।

বেশ কিছু মাংসের দোকানে হানা দিয়ে পুরকর্তারা কী করা যাবে, আর কী নয়, সে সংক্রান্ত পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়। পুরসভার নির্দেশ, মাংসের দোকানে মরা মুরগি বা খাসির মাংস বিক্রি করা যাবে না। বাসি মাংস বিক্রিতেও থাকছে নিষেধাজ্ঞা। যে জায়গায় বিক্রির আগে খাসি বা মুরগি এনে রাখা হয়, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্রেতাদের কোনও অভিযোগ থাকলে, তা গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে পুরসভাকে জানাতে হবে। রেস্তরাঁ-মালিক এবং মাংসের দোকানিদের কাছে লিফলেটও বিলি করা হয়। পুরসভার পক্ষ থেকে মরা জীবজন্তুর নিয়মমাফিক সৎকারের কথাও বলা হয়েছে ওই লিফলেটে। যত্রতত্র মরা জীবজন্তু ফেলার উপরেও নিষেধা়জ্ঞা জারি করা হয়েছে।

মেয়র জানান, অভিযান চলবে। প্রথমে শহরের রেস্তরাঁ-মালিক এবং মাংস বিক্রেতাকে সর্তক করা করা হল। বিধি না-মানলে এরপর আইন মাফিক কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন