হাওড়ায় বিজেপিকে স্বস্তি দিল সাঁকরাইল

ব্যতিক্রম সাঁকরাইল। পঞ্চায়েত ভোটে হাওড়া জেলার অন্যত্র বিজেপি তেমন ভাল ফল না-করলেও সাঁকরাইল কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। যা চিন্তায় ফেলেছে শাসকদলকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০০:২৪
Share:

ব্যতিক্রম সাঁকরাইল। পঞ্চায়েত ভোটে হাওড়া জেলার অন্যত্র বিজেপি তেমন ভাল ফল না-করলেও সাঁকরাইল কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। যা চিন্তায় ফেলেছে শাসকদলকে।

Advertisement

জেলায় পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৪৬২। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে ১০টিই এসেছে সাঁকরাইল থেকে। ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪৬টি আসন। ভোট হয়েছে ৪৫টিতে। তৃণমূল পেয়েছে ৩৩টি। সিপিএম এবং নির্দল পেয়েছে যথাক্রমে একটি এবং দু’টি আসন। একটি পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। তিনটিতে শাসকদলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে।

জেলার অন্য পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেখানে সাঁকরাইলে এই ফল কী ভাবে? রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, নিজের দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার ব্যর্থ হয়েছেন। তার প্রভাবই পড়েছে নির্বাচনের ফলে। বিজেপির হাওড়া জেলা (সদর) সভাপতি সুরজিৎ সাহার দাবি, ‘‘সাঁকরাইলের মতো ফল অন্যান্য ব্ল‌কেও হতে পারত। কিন্তু তৃণমূল অন্যত্র বেশি সন্ত্রাস করেছে।’’

Advertisement

সন্ত্রাসের অভিযোগ তৃণমূল মানেনি। শীতলবাবুর সঙ্গে ফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘এটা সিপিএম-বিজেপির গোপন আঁতাঁতের ফল। সিপিএমের ভোটগুলিই পেয়েছে বিজেপি।’’ সিপিএম আবার ঠিক উল্টো অভিযোগ তুলেছে। দলের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘তৃণমূলই সিপিএমকে শেষ করতে বিজেপিকে মদত দিয়েছে।’’

আগে বহুবার শীতলবাবুর অনুগামীদের সঙ্গে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাদা ছোড়াছুড়ির পর্যায়ে চলে যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে। বহু যোগ্য প্রার্থীকে সমিতিতে টিকিট দেওয়া হয়নি। এর ফলে তাঁরা একদিকে যেমন বিক্ষুব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন, অন্যদিকে অনেক তৃণমূল কর্মী ভিতরে ভিতরে বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। এই পরিস্থিতির জন্য তাঁরা শীতলবাবুকেই দায়ী করেছেন।

তা ছাড়া, নিজে বিধায়ক হয়েও নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করার অভিযোগও ওঠে শীতলবাবুর বিরুদ্ধে। নলপূরে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন মঞ্জু বসু। এই আসনেই আবার নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে যান তৃণমূলের ঝুমঝুম নস্কর। শীতলবাবু ঝুমঝুমের হয়ে প্রচার করেন। কিন্তু ভোটে মঞ্জু এবং ঝুমঝুম নয়, জিতে যান বিজেপি প্রার্থী। শীতলবাবুর এমন খামখেয়ালি আচরণের ফলে বহু বিজেপি প্রার্থী জিতে গিয়েছেন বলে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। শীতলবাবু যদি গোষ্ঠী-কোন্দল বন্ধ করতে পারতেন, তা হলে জেলার অন্য অংশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতিতেও দলের ফল অনেক ভাল হতো বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একটা বড় অংশ।

সাঁকরাইলে গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৬। তার মধ্যে ১২টি পঞ্চায়েত পড়ে শীতলবাবুর বিধানসভা কেন্দ্রে। বাকি চারটি হাওড়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে। পঞ্চায়েতে বিজেপি যে ১০টি আসন পেয়েছে, সবই শীতলবাবুর অধীনে থাকা ১২টি পঞ্চায়েত এলাকার। এখানকারই মানিকপুর পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। বানুপুর-১, ২ এবং কান্দুয়া পঞ্চায়েতেও তারা তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন