চোর সন্দেহে রাতভর মার কিশোরকে

জন্মদিনের পার্টিতে মোবাইল থেকেই গান বাজানো হচ্ছিল বক্সে। কিন্তু পার্টি শেষ হতেই সেই মোবাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছিলেন গৃহকর্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৯
Share:

জন্মদিনের পার্টিতে মোবাইল থেকেই গান বাজানো হচ্ছিল বক্সে। কিন্তু পার্টি শেষ হতেই সেই মোবাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছিলেন গৃহকর্তা। এর পরে বক্স মেশিন অপারেট করার জন্য থাকা এক কিশোরকে চুরির অপবাদ দিয়ে সারা রাত আটকে রেখে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল ওই গৃহকর্তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, হাত-পা বেঁধে ওই কিশোরকে আবাসনের ছাদ থেকে ঝুলিয়ে নীচে ফেলে দেওয়ারও ভয় দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ।

Advertisement

রবিবার রাতে বেলুড় গিরিশ ঘোষ রোডে এই ঘটনা ঘটেছে। ওই কিশোরের থেকে সব কিছু জানার পরে সোমবার রাতে এ বিষয়ে বেলুড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার পরিবারের লোকেরা। মঙ্গলবার সকালে হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তাদের সঙ্গেও দেখা করে বিষয়টি জানায় ওই কিশোর। পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তেরা সকলে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (উত্তর) ভাবনা গুপ্ত বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে সর্বত্র তল্লাশি চলছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বেলুড় গিরিশ ঘোষ রোডের তালতলা এলাকার বাসিন্দা দুখু দাস নামে বছর পনেরোর ওই কিশোর স্থানীয় এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রির হয়ে ছোটখাটো কাজ করে। রবিবার বেলুড় ফাঁড়ির কাছেই এক আবাসনের বাসিন্দার ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই বক্সে-মেশিন অপারেট করতে গিয়েছিল দুখু।

Advertisement

ওই কিশোর পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বক্স ঠিক মতো বাজছে না বলে ঠিকঠাক করে দিয়ে সে চলে আসে। এর পরে ১১টা নাগাদ বক্স আনতে গেলে ওই গৃহকর্তা তার কাছে মোবাইল ফেরত চান। কিন্তু সে জানায়, মোবাইল নেয়নি। অভিযোগ, কথাটা শুনেই দু‌খুকে প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারেন ওই গৃহকর্তা ও তাঁর সঙ্গীরা। এর পরে ওই কিশোরের হাত-পা বেঁধে একটা ঘরে আটকে রেখে লাথি, চড়, ঘুষি মারা হয় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। দুখুর কথায়, ‘‘অনেক রাতে আবাসনের ছাদে নিয়ে গিয়ে রেলিং থেকে আমার মাথা নীচের দিক করে ঝুলিয়ে দিয়ে বলছিল ফেলে দেবে। বারবার বলছিলাম, আমি তো ছিলামই না। মোবাইল নেব কী করে? তবেশেষে মার সহ্য করতে না পেরে বলেছিলাম আমিই মোবাইল নিয়েছি।’’ শেষে সাড়ে ৪টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসে দুখু।

তার মা সন্ধ্যাদেবী জানান, সকাল ১০টা নাগাদ আবার ওই বাড়িতে ছেলেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও তাঁরা জানতেন না ছেলের উপরে কী অত্যাচার হয়েছে। এ দিন দুখু বলে, ‘‘সকালে গেলে ওঁরা বলেন, ‘জানি তুই মোবাইল নিসনি। কিন্তু কাউকে কিছু বলবি না।’ এর পরে বাড়ি এসে সব বলি।’’ বেলুড় থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই পুলিশ ওই আবাসনে গিয়ে দেখে অভিযুক্তেরা সকলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সীমা ভৌমিক বলেন, ‘‘একটা বাচ্চাকে এ ভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। অন্যায় করলে তার বাবা-মা কিংবা পুলিশকে জানাতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন