নিলাম ছাড়াই বেদখল হচ্ছে সরকারি ইট

ইট গিয়েছে চুরি! গ্রামের যোগাযোগ মসৃণ করতে ইটের রাস্তায় পিচ পড়ছে। কোথাও হচ্ছে ঢালাই। কিন্তু পুরনো ইটগুলি যাচ্ছে কোথায়? সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, দরপত্র ডেকে সেই ইট নিলাম হওয়ার কথা।

Advertisement

মণিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:০২
Share:

ইট গিয়েছে চুরি!

Advertisement

গ্রামের যোগাযোগ মসৃণ করতে ইটের রাস্তায় পিচ পড়ছে। কোথাও হচ্ছে ঢালাই। কিন্তু পুরনো ইটগুলি যাচ্ছে কোথায়? সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, দরপত্র ডেকে সেই ইট নিলাম হওয়ার কথা। কিন্তু গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় নিলাম ছাড়াই হাজার হাজার পুরনো ইট হাতবদল হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে দাম পাচ্ছে না পঞ্চায়েতগুিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই বেনিয়ম রুখতে নেই পর্যাপ্ত নজরদারি।

জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক ধরেই জেলার অর্ধেকের বেশি ইটের রাস্তা ঢালাই করা হয়েছে। কয়েকটি ইটের রাস্তা আবার সম্প্রসারিত হয়ে পিচের রাস্তা হয়ে গিয়েছে। এখনও কাজ চলছে অনেক জায়গায়। কিন্তু পুরনো ইটগুলি পদ্ধতি মেনে নিলাম করা হয়নি বলে দাবি। উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা, সাঁকরাইল, শ্যামপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ১ হাজার পুরনো ইটের দাম হল ২-৩ হাজার টাকা। অভিযোগ, কিন্তু সেই দাম তো মিলছেই না, কোথাও কোথাও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রায় বিনামূল্যে সেই পুরনো ইটগুলি দখল করছেন পঞ্চায়েত স্তরের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন।

Advertisement

সম্প্রতি উলুবেড়িয়া ২ নম্বর ব্লকের জোয়ারগড়ি পঞ্চায়েতের নয়াচকের একটি ইটের রাস্তাকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় পিচ করার পরিকল্পনা করে পঞ্চায়েত। সেই অনুযায়ী ওই রাস্তার ইট তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। রাস্তার ইট তোলার খবর পেয়েই উলুবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা দিবাকর সিংহ তাঁর দলবল নিয়ে ওই রাস্তা থেকে প্রায় ১০ হাজার ইট তুলে নেয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানতে পেরে ওই পঞ্চায়েতের এক ঠিকাদার দিবাকরবাবুর থেকে ওই ইটের হিসেব চাইলে বচসা হয়। খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসনের লোক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। যদিও দিবাকরবাবু অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘ইট তুলে নেওয়ার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা শ্মশান সংস্কারের জন্য কিছু ইট তুলে রেখেছিল। পঞ্চায়েতের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদার সেই ইট নিয়ে আসতে গেলে গোলমাল হয়।’’ জোয়ারগড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান তনুশ্রী সিংহ অবশ্য পুরো ঘটনার কথাই অস্বীকার করেছেন। তবে ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইট তোলা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। প্রশাসনের লোকেরা গিয়ে সমস্যা মিটিয়েছে।’’

শুধু জোয়ারগড়ি পঞ্চায়েতই নয়, বেআইনিভাবে সরকারি ইট দখলের নির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে শ্যামপুর ২ ব্লকের খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতে। এই এলাকার ১৩ মাইল থেকে হোগলাসী-মামুদপুর পর্যন্ত ইটের রাস্তা এখন পিচ করা হচ্ছে। এই রাস্তার পুরনো ইট বিক্রি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। একই অভিযোগ উঠেছে শ্যামপুর ২ ব্লকের বাছরি ও বারগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। শ্যামপুরের বাসিন্দা তথা কংগ্রেস নেতা তরুণ সামন্তের দাবি, ‘‘রাস্তার ইট তোলা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করছে শাসক দল। পদ্ধতি মেনে কোথাও নিলাম হচ্ছে না। যেমন খুশি দামে বিক্রি হচ্ছে সরকারি ইট।’’

হাওড়া জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ রকম কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement