প্রতীকী ছবি।
মাঝে শুধু আট মাসের বিরতি। জাতীয় সড়কে ফের সেই ‘ঝুঁকির দৌড়’ শুরু।
গত বছর জুন মাসের গোড়ায় সেটাও ছিল এক রবিবার। প্রায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে জাতীয় সড়ক দিয়ে ছুটে চলেছিল দামি ‘ফেরারি’ গাড়িটা। গতি এতটাই বেশি ছিল যে চোখের নিমেষে গাড়িটা বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ডোমজুড়ের পাকুরিয়া সেতুতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরেন চালক, তথা কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিবাজি রায়। গাড়িটি সজোরে ধাক্কা মারে সেতুর গার্ডওয়ালে। কয়েকবার রাস্তার উপরের উল্টে যায় গাড়িটি। সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মৃত্যু হয় শিবাজির। জখম হন গাড়ির আরোহী এক তরুণীর।
সেই দুর্ঘটনার পরে আর রবিবার বা ছুটির দিনে দামি গাড়ি-মোটরবাইকের দৌড় দেখা যাচ্ছিল না দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। স্বস্তি পেয়েছিলেন সাধারণ গাড়ি-চালকেরা। কিন্তু ফেব্রুয়ারির প্রথম রবিবারেই ফিরে এল সেই দৌড়। ডানকুনি থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে হয়ে চারটি দামি মোটরবাইক এবং পাঁচটি দামি বিদেশি গাড়িকে গতির ঝড় তুলে যেতে দেখা গেল পালসিটের দিকে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না পুলিশ প্রশাসনকে!
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প অধিকর্তা অরিন্দম হান্ডিক বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টিই সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের দেখার কথা। ওই সড়কে গাড়ির নির্ধারিত গতি ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। কেউ যদি সেটা না মানেন, পুলিশের তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা বা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। এটা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ করতে পারেন না। যদি পুলিশের মনে হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় গাড়ির গতি কিছুটা কম থাকা জরুরি, পুলিশ সেই ব্যবস্থা নিতে পারে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চর্তুবেদী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে মানুষের নিরাপত্তায় যা করা যায় করব।’’
ফেরারি দুর্ঘটনার আগে পর্যন্ত মূলত রবিবার সকালে বিদেশি দামি গাড়ি-বাইকের দৌড় দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারের এলাকার ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা। এ জন্য গুড়াপ, ডানকুনিতে ভিড়ও হতো। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, মূলত কলকাতার দিক থেকে ফেরারি, ল্যামবারগিনি, জাগুয়ারের মতো দামি গাড়ি বা মোটরবাইকগুলি মুম্বই রোড ধরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে আসে।। সোজা গুড়াপ ছুঁয়ে বর্ধমানের পালসিট চলে যায়। কখনও আবার গাড়ি-বাইকগুলি গুড়াপের একটি নামী ধাবাতে গিয়ে থামে। সেখানে আরোহীরা সাময়িক বিশ্রাম এবং খাওয়া-দাওয়া করে প্রবল গতিতেই কলকাতা ফিরে যান।
ফেরারি দুর্ঘটার আট মাস পরে ফের সেই দৌড় ফিরে আসায় আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়ে ওই রাস্তায় কেন তাঁরা ওই সব প্রবল গতির গাড়ির জন্য বিপদের আশঙ্কায় থাকবেন? কেন প্রশাসন এর স্থায়ী সমাধানে ব্যবস্থা নেয় না? উত্তরপাড়া কোতরংয়ের বাসিন্দা বিজন দাস বলেন, ‘‘ওই পথে আমি নিয়মিত যাই। রবিবার দুর্গাপুরে যেতে গিয়ে দেখি চোখের পলকে আমার গাড়ি দিকে ধেয়ে আসছে ওইসব গাড়ি। চালক অপ্রস্তুত থাকলে নিজে বাঁচার জন্য সরতেও পারবে না।’’